১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ছন্দপতনের হাত থেকে কোনোমতে বাঁচল পুঁজিবাজার

-

- মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় বিক্রির চাপ
- ডিএসইর মূলধন ফিরেছে ০.৪২ শতাংশ

হঠাৎ ছন্দপতন দেখা গেছে গতকাল পুঁজিবাজারের লেনদেনে। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে বাঁচাতে পেরেছে। দিনের লেনদেনের শুরুতে যদিও বড় উত্থান প্রবণতা দেখা যায়। শুরুর প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর সূচক ৫৬ পয়েন্টের বেড়ে যায়। তারপর পেছনে হাঁটতে থাকে। এক পর্যায়ে সূচক নেতিবাচক অবস্থানের দিকে মোড় নেয়। যদিও শেষবেলায় সামান্য কিছু পয়েন্টে ইতিবাচক ধারায় অবস্থানে লেনদেনের সমাপ্তি হয়। ঢাকা স্টকে ৫৮.২৯ শতাংশ কোম্পানি দরপতনের শিকার হয়। একই পরিণতি ছিল চট্টগ্রাম স্টকে। সেখানে প্রায় ৪৭ শতাংশ কোম্পাানি দরপতনের শিকার হয়েছে। বাজার লেনদেনে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজার মূলধন ০.৪২ শতাংশ ফিরেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে বিক্রির চাপ ছিল। মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতাও রয়েছে। পাশাপাশি গতকাল নতুন বিনিয়োগকারীদেরও পদচারণা ছিল।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের যে গতি ছিল সেটা হারিয়েছে গতকাল। প্রথম আধঘণ্টায় যতটা উঠেছিল সূচক, তিন ঘণ্টার মাথায় ঠিক ততটাই নিচে নেমে আসে। ডিএসইর প্রধান সূচক সিএসইএক্স মাত্র ৩ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে এখন পাঁচ হাজার ২৪৭.১৩ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ০.৫৯ পয়েন্ট পেয়ে এখন এক হাজার ১৪৬.৫৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে এখন এক হাজার ৮৭৭.৫০ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ১২ কোটি ৯৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৪৮৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৫৫৭ টাকা বাজারমূল্যে। যা বৃহস্পতিবার ছিল ৪৫২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়। টাকায় লেনদেনে ৭ শতাংশ এবং শেয়ার হাতবদল ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে ৫৮.২৯ শতাংশ বা ২৩২টি দরপতনের শিকার। আর দর বেড়েছে ১১১টির এবং দর অপরিবর্তিত ৫৫টির। দর পতনের মধ্যে এ শ্রেণীর কোম্পানি ছিল ১২৬টি। আর মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭টি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ছিল মাত্র তিনটি, দরপতনে ২২টি এবং অপরিবতিত ছিল ১২টির দর। বাজারমূলধন ০.৪২ শতাংশ বেড়ে এখন ছয় লাখ ৪৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া ৫৯টি কোম্পানির এক কোটি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৪৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া পাঁচ কোম্পানি হলো- সি পার্ল হোটেল, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফাইন ফুডস এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই পাঁচ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল হোটেলের। কোম্পানিটির ৯ লাখ ৩৪ হাজারটি শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকায়। এ ছাড়া এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের তিন কোটি ৮০ হাজার টাকার আর তিন কোটি ৮০ হাজার টাকার আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট বেচাকেনা হয়েছে। আর ফাইন ফুডসের তিন কোটি ৬১ লাখ ২১ হাজার টাকার এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তিন কোটি ৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টকে সবগুলো সূচক উল্লেখ করার মতো সংখ্যায় ফিরেছে। সিএএসপিআই ৩৪.৮৯ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ২২.৩৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৭৬.২৪ পয়েন্ট এবং সিএসই-৫০ সূচক ১.৯৮ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। ২০৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বেড়েছে মাত্র ৭৫টির, দর হারিয়েছে ৯৫টি এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। ২২ লাখ ৪০ হাজার ৮২টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১০ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ৩৭০ টাকা বাজারমূল্যে। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ১২১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার।
বাজার বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল পর্যালোচনায় বলছে, মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় সূচক স্থিতিশীল। টানা পাঁচ দিন বাড়ল ডিএসইএক্স সেই সাথে লেনদেনের পরিমাণও। দিনের প্রথম আধা ঘণ্টায় সূচক ৫৩শ’ পয়েন্ট স্পর্শ করে। তবে এরপরই বাজারে বিক্রির চাপ দেখা যায়। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের বিপরীতে কর রেয়াত পাওয়ার ইস্যুতে পুরনোর পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। যা সূচক ও লেনদেনের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং মূলধন গত দিনের চেয়ে ০.৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১৬ শতাংশ এবং টার্নওভার ৭ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১১টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৮টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে।
ফ্লোর প্রাইসে ছয়টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২০.২৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬৩.১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে সাত কোটি টাকা। যা গত দিনের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। সারা দিন ভালো-মন্দের মধ্য দিয়ে গেলেও দিনশেষে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement