১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অব্যাহত পতনে ৮২ হাজার বিও হিসাব নিষ্ক্রিয়

শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না
-

গত এক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারের দৈন্যদশাতে স্থানীয় ও প্রবাসী উভয় বিনিয়োগকারীরা সরে গেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ কারণে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সাত হাজার ৭৯১টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আর স্থানীয় ৭৪ হাজার ৫৭৬টি বিও হিসাব ঘুমিয়ে আছে। এগুলো থেকে বিনিয়োগও সরে গেছে। আর সার্বিকভাবে গত এক বছরে সাড়ে ৮১ হাজারের বেশি বিও হিসাব নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। আর কোনো ধরনের অর্থ বা ব্যালান্স নেই এমন বিও হিসাব হলো ৯৩০টি বলে সিডিবিএলের হালনাগাদ তথ্য থেকে এসব জানা গেছে।
তাদের তথ্য বলছে, ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন বিও হিসাব বেড়েছে এক বছরে এক হাজার ৪৮১টি। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারের যে মন্দা অবস্থা তাতে বিনিয়োগকারীরা কেনইবা লেনদেন করবে। চাঞ্চল্যতা নেই। আছে আতঙ্ক ও অনাস্থা। আস্থা ফিরাতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবাইকে। তা না হলে বাজারে নিষ্ক্রিয় ও শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা দিন দিন বাড়বেই; যা আমাদের কাম্য না।
উল্লেখ্য, বিও হলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন সম্ভব নয়।
বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। তাদের হালনাগাদ তথ্য বা পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের মে মাস থেকে চলতি ২০২৪ সালের ২২ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ ও লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত বিও হিসাবের মধ্যে ৮১ হাজার ৫৬৭টি এখন আর পরিচালনায় নেই। বিনিয়োগ তুলে নেয়ায় এখন সেগুলো নিষ্ক্রিয়। শূন্য হয়েছে এক বছরে এমন বিও ৯৩০টি। ২০২৩ সালের ২ মে দেশের পরিচালনা হয় এমন বিও হিসাব ছিল মোট ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২৫৫টি; যা ২১ মে পর্যন্ত কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৮টি। কমেছে ৮১ হাজার ৫৬৭টি।
সিডিবিএলের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের মে মাসের সূচনাতে প্রবাসীদের সক্রিয় বিও হিসাব ছিল ৬২ হাজার ৮৩৮টি; যা এক বছরে ক্রমেই কমে এখন ৫৫ হাজার ৪৭টিতে ঠেকেছে। ফলে এখানে সাত হাজার ৭৯১টি প্রবাসী বিও আর সক্রিয় নেই। এরা তাদের শেয়ারগুলো ছেড়ে দিয়েছে। অথবা নতুন করে কোনো লেনদেনে জড়াচ্ছে না। আর গত বছরের মে মাসের সূচনায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় বিও ছিল ১৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৭টি। বাজারের এই চরম মন্দাবস্থার কারণে তারাও বিক্রির চাপ বাড়িয়ে শেয়ারগুলো চেড়ে দিয়েছে। নতুন করে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে যাচ্ছে না। ফলে এক বছরে এদের ৭৪ হাজার ৫৭৬টি বিও হিসাব নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে।
পুঁজিবাজারের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারের ওপর দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। সে কারণে তারা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। ফ্লোর প্রাইস এক দফায় তাদের আস্থা নষ্ট করেছে। এখন দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা সঙ্কট আরো প্রবল হয়েছে। এই বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ ঠিক নয়। শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement