অব্যাহত মন্দায় পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপ ছিল ৭৪ শতাংশ
সূচক পতনে দর হারিয়েছে ৬৫.৮১ শতাংশ কোম্পানি- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১০ মে ২০২৪, ০০:০৫
আবারো মন্দা বা পতনের সিলসিলার পথেই দেশের পুঁজিবাজার। দুই দিন দর বাড়িয়ে বাজারকে চাঙ্গার আলো দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের টেনে এনে নিরাশ করেছে। অব্যাহত মন্দায় ৭৪ শতাংশ বিক্রির চাপে ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দেয়ার দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এই মন্দায় ক্রেতা পাচ্ছে না তেমন। ২৬ শতাংশ কিনতে চাইলেও তারা এন শ্রেণীর শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছে। এ এবং বি শ্রেণীর শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারগুলো বিক্রিতে আগ্রহী ছিলেন গতকাল। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মন্দা দশায় লেনদেন বুধবারের তুলনায় বাড়লেও বাজারমূলধন থেকে দুই হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা চলে গেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বাজার বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটাল বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা, বাজার চালিত সুদের হার এবং নীতিগত হার বৃদ্ধির কারণে সতর্ক বিনিয়োগকারীরা। অপর দিকে গত বুধবারের তুলনায় গতকাল বাজারের লেনদেন ৪.৮ শতাংশ বেড়েছে। সার্বিকভাবে বাজারমূলধন ডিএসইর ০.৩৭ শতাংশ কমেছে। ১৯টি খাতের মধ্যে ১৬টি খাতই লোকসান দিয়েছে গতকাল। আর তিনটি খাত লাভে রয়েছে। পুঁজিবাজার গতকাল বিক্রির চাপে ছিল। ৬৯ শতাংশই ছিল বিক্রেতাদের চাপে।
আর প্রাতিষ্ঠানিক বাজার বিশ্লেষক লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স সূত্র বলেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক টেনে উঠানোর চেষ্টায় ছিল ১০ কোম্পানি। এই দশ কোম্পানি গতকাল ডিএসইর সূচকে ৯.৩৬ পয়েন্ট যোগ করেছে। আর এরা হলোÑ সাইফ পাওয়ারটেক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, লাভেলো আইস্ক্রিম, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, জিপিএইচ ইস্পাত, বেস্ট হোল্ডিংস এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে। আবার অল্পসময়ের মধ্যেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। লেনদেনের সময় ১০ মিনিট গড়ানোর আগেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ দপুর ১২.২০টা পর্যন্ত ডিএসইতে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫১ হাজার ২৩৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৫৬৪ কোটি ৪৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকায়। ওই সময় ডিএসইর মূল ডিএসইএক্স ও ডিএসই-৩০ সূচক ইতিবাচকই ছিল। কিন্তু শরিয়াহ সূচকটি নেতিবাচক পথে চলছিল। ১৬৪টি কোম্পানি দর হারালেও ১৭৯টি দর বৃদ্ধিতে ছিল। আর চট্টগ্রামে ৯১টি বা বেশির ভাগ কোম্পানি দরপতনের কবলে ছিল। ৬৮টি কোম্পানি দর বৃদ্ধিতে থাকলেও ২৪টি ছিল দর অপরিবর্তিতের তালিকায়। সবগুলো সূচকই পয়েন্ট হারিয়ে চলছিল। ৫৪ লাখ ৯ হাজার ৪৮৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয় ২৫ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৫১৫ টাকায়।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯.৭৩ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৬৬১.০৪ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৭.৮৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৪২.৫৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৯৮ পয়েন্ট হারিয়ে অবস্থান করছে দুই হাজার ১৫.২৩ পয়েন্টে। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন ২.৩২ শতাংশ বেড়েছে ডিএসইতে ২৫ কোটি ৮৬ লাখ ১৪ হাজার ৩০৩টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে ৯১১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮১৩ টাকায়। যেখানে বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৮৬৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার। ফলে লেনদেন টাকায় বেড়েছে ৪.৮১ শতাংশ বা ৪১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯৩টির, কমেছে ২৫৮টির বা ৬৫.৮১ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির। এখানে এ শ্রেণীর ১৬১টি কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। আর মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৭টি লেনদেনে থাকলেও দর কমেছে ২৭টি এবং দর বেড়েছে মাত্র দু’টির।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৪৩টি কোম্পানির ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতদবদল হয়েছে মোট ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা গতকালের বাজারমূল্যে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হযেছে লাভেলো আইসক্রিমের। কোম্পানিটির আঠারো লাখ ৭৮ হাজার ৮৮টি শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বাজারদরে। এ ছাড়া আরো ৯ কোম্পানির মধ্যে, বিএসআরএম লিমিটেডের দুই কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার, এক কোটি ৯২ লাখ টাকার এনসিসি ব্যাংকের, রেনেটার এক কোটি ৫১ লাখ টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের এক কোটি ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার, ম্যারিকোর এক কোটি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার টাকার, ওরিয়ন ইনফিউশনের এক কোটি ৩১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার, আফতাব অটোমোবাইলসের এক কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকার এবং আইসিবি সোনালী ওয়ানের এক কোটি এক লাখ ৫২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এই ১০ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকারও বেশি।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবগুলো সূচকই তার পয়েন্ট হারিয়েছে নতুন করে। সিএএসপিআই থেকে ৮১.১৯ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স থেকে ৪৮.৮০ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক থেকে ৩৪.২৬ পয়েন্ট খোয়া গেছে। এক কোটি ১১ হাজার ৭৪৪টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৫৭ কোটি ৯১ লাখ ৬২ হাজার ১০১ টাকায়। যেখানে বুধবার লেনদেন হয়েছিল ১১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার। ফলে টাকায় লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা