১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দিনাজপুরে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ভুট্টা চাষের সাফল্য

-

জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে কৃষকরা ধান, গম, আলু ও সরিষার পাশাপাশি ভুট্টা লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত চাষে সফলতা অর্জন করেছে। কৃষকরা এ মৌসুমে জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।
গতকাল রোববার বিকেলে দিনাজপুর কৃষি অধিদফতর উপ-পরিচালক মো: নুরুজ্জামান মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল । তিনি জানান, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে । অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হয়ে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, গত দু’দিন ৬ ও ৭ এপ্রিল জেলার বিভিন্ন উপজেলার ভুট্টার ক্ষেত ঘুরে সরেজমিন দেখেছেন। তার দৃষ্টিতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা ভুট্টার গাছের পাশ দিয়ে আইল দিয়েছেন। তার সঙ্গে পানি সেচ দিয়ে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিয়েছেন। আগাম যারা ভুট্টা চাষ করেছে, সেসব ভুট্টার ক্ষেতে ভুট্টার প্রতিটি গাছে ফল পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। আগামী ১৫ এপ্রিলের পর থেকে আগাম জাতের ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে । এভাবে আগামী জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ চলমান থাকবে। এখন কৃষকের জন্য রয়েছে ভুট্টা মাড়াইয়ের অনুকূল আবহাওয়া। তবেই তারা তাদের অর্জিত ভুট্টা সহজে মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারবেন।

তিনি বলেন, গত কার্তিক মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ভুট্টা লাগানোর কাজ চলছে। আগাম জাতের ভুট্টা পরিপক্ক হয়েছে। অপর দিকে নতুন লাগানো ভুট্রার গাছ কেবল সচল হয়ে উঠছে । কৃষকেরা পরিচর্যার কাছে ব্যস্ত রয়েছে।
তিনি জানান, আধুনিক কৃষকেরা ভুট্টা চাষে পরিপক্ক হয়ে গেছে। তারা ভালো ফলনের আশায় এবার উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা জাত চাষ করেছেন। দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ গ্রামের ভুট্টা চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমে ভুট্টা চাষের জমিতে ২০ কেজি পটাস, ২৫ কেজি ফসফেট, ১০ কেজি জিপ সার, ১ কেজি বরন, ১ কেজি দানাদার ও ১ কেজি সালফার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমি তৈরি করেন চাষিরা। পরে বিঘাপ্রতি ৩ কেজি ভুট্টার বীজ রোপণ করেন তারা। এক মাসের মাথায় আইল বেঁধে বিঘাপ্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ডেপ ও ২ কেজি থিওভিট ছিটিয়ে ক্ষেতে পানি সেচ দেন তারা । বীজ রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্য ভুট্টা কাটা-মাড়াই করে থাকেন কৃষকরা।
ভুট্টার বীজ রোপণ থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়।
জেলার হাকিমপুর উপজেলার ভুট্টা চাষি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘গতবার আমি ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছিলাম। দামও ভালো পাইছি। তাই এবছর ৩ বিঘা জমিতে সফল আবাদ করছি। আশা করছি ভালো ফলন পাবো।
সাজিবর রহমান নামের এক চাষি বলেন, প্রতি বছর আমি এক বিঘা করে ভুট্টার আবাদ করি। এ বছরও আবাদ করছি, দেখি কেমন হয়। অল্প জমি তাই নিজেই সব কাজ করি, এতে খরচ কম হয়। আশা করছি এবার ভুট্টার ভালো দাম পাবো।
জেলার হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম বলেন, হিলিতে এবার ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯৬ হেক্টর জমিতে । ইতোমধ্যে তার অতিরিক্ত ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হয়েছে। আলুচাষিরাও ক্ষেত থেকে আলু তুলে ভুট্টা চাষ করেছেন। আমরা সরকারিভাবে ২৫০ জন ভুট্টা চাষিকে ২ কেজি হাইব্রিট ভুট্টা বীজ ও ৩০ কেজি সার বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। আশা করি আগামীতে ভুট্টা চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, চলতি রবি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলা সবগুলো উপজেলাতেই ভুট্টা চাষ হয়ে থাক। ইতোমধ্যে ৭৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে । এবারে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে ভুট্টা চাহিদা অনেক রয়েছে। কৃষকরা সহজে তাদের উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement