২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে চার দিন ধরে কমছে সূচক

কিছুটা বেড়েছে লেনদেন
-

ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের সংবাদে কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে আবার টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ক’টি মূল্যসূচকের পতনের মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস দরপতন ঘটল। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সুবিধা দেয়ার ফলে শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। ৪ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে নেমে যাওয়া ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসএক্স হু হু করে বেড়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে চলে আসে।
এরপরই ঘটে ছন্দপতন। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা চার কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। এই চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১৩৭ পয়েন্ট। অবশ্য তার আগে ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি টানা উত্থানে সূচকটি বাড়ে ৩৭৩ পয়েন্ট।
বড় উত্থানের পর শেয়ারবাজারে দেখা দেয়া টানা দরপতনকে স্বাভাবিক বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বড় উত্থানের কারণে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এ কারণে মুনাফা তুলে নিতে বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। এতে বাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিগগিরই বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই সূচকে নেতিবাচক প্রবণতা। এতে ১০ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ২২ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের এই নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৫৫০ পয়েন্টে নেমে গেছে। ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সব ক’টি মূল্যসূচকের পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৫টির। ৫১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ দিকে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬২৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬০০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছেÑ গ্রামীণফোন, ওরিয়ন ইনফিউশন, ফরচুন সুজ, সায়হাম কটন, সামিট পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ও ওরিয়ন ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ১১৫ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ব্লক মার্কেট : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার ব্লক মার্কেটে মোট ১০ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৭৫টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার আর্থিকমূল্য ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস লিমিটেডের। গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া ব্লকে লেনদেন করা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑ অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ফরচুন সুজ, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কুইন সাউথ টেক্সটাইল ও ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড।
সিটি ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ৩০০ কোটি টাকার নন-কনভার্টেবল জিরো কুপন বন্ড অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মঙ্গলবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭২০তম কমিশন সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। কমিশন সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বন্ডটির মেয়াদ হবে তিন বছর। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ নন-কনভার্টেবল, পূর্ণ অবসায়ন, অতালিকাভুক্ত এবং জিরো কুপন বন্ড। বন্ডটি তিন বছরে পূর্ণ অবসায়ন হবে। এই বন্ড বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীরা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। বন্ডটির অভিহিত মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থ সিটি ব্যাংক মূলধনভিত্তি শক্তিশালী করার কাজে ব্যবহার করবে। এই বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। আর ম্যানডেটেড লিড অ্যারেঞ্জার হিসেবে রয়েছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড।

 


আরো সংবাদ



premium cement