১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সূচকের উত্থানেও ৪৪.৪১ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের কবলে

শেয়ারবাজার
-


সূচক হারানোর মাঝে লেনদেন শুরু হয়। উত্থান-পতনেই ছিল গতকালের পুঁজিবাজার। তবে ১১.২৬টায় ডিএসইর প্রধান সূচক সর্বনিম্নে নেমে আসে। দু-এক দিনের উত্থান বা শত পয়েন্ট সূচকে ফিরে আসরেও বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছে না। বিক্রির চাপই এখন বাজারকে ব্যস্ত রেখেছে। গতকাল দিনের শেষ উত্থান দিয়ে হলেও ৪৪.৪১ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার ছিল। চট্টগ্রামে টাকায় লেনদেন এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। ঢাকায় পাঁচ শ’ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। মূলধন সামান্য কমেছে। ছয়টি কোম্পানির শেয়ারের কোনো বিক্রেতা ছিল না। সূচক বাড়লে বেশির ভাগ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তোলার পরিবর্তে লোকসানে নেমেছে।
লেনদেনের তথ্য থেকে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেন শুরুর ১৫ মিনিটের মাথায় সূচক নেতিবাচক হয়ে পড়ে। আর প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার পর দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে সূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু সূচকের সেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি। বেলা সাড়ে ১১টার পর আবার দরপতনের তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। ফলে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।

দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৭.৬৫ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৩১৬.৬৫ পয়েন্টে, ‘ডিএসইএস’ বা শরিয়াহ সূচক ১.৯৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৮৪.৯৫ পয়েন্ট এবং ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ২.১০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৭২.২০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসইতে গতকাল ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৪৭৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪৮ টাকা বাজারমূল্যে। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৫৭৭ কোটি ৬৬ লাখ সাত হাজার টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে ৯৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। লেনদেনে অংশ নেয়া মোট ৩৯৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫২টির বা ৩৮.৫৭ শতাংশের, দর পতনে ১৭৫টি বা ৪৪.৪১ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৭টির। ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ছয়টির, দর পতনে ১৭টি এবং দর অপরিবর্তিত ১৪টি। বাজার মূলধন ০.০৬ শতাংশ কমে এখন ছয় লাখ ৭১ হাজার ৬০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল সর্বোচ্চ দর বেড়েছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৯.৯৫ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। অন্যগুলোর মধ্যে নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৮৫ শতাংশ, ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯.৮১ শতাংশ শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড, কনফিডেন্স সিমেন্টের ৮.৮১ শতাংশ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের ৯.৭০ শতাংশ, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ৮.৪৩ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৭.৬৭ শতাংশ, কেডিএস এক্সেসরিজের ৭.৬৪ শতাংশ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ৭.৪৫ শতাংশ এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্স পিএলসির ৭.৩৪ শতাংশ দর বেড়েছে।

দর পতনের শীর্ষ ১০ : পৌনে দুই শ’ কোম্পানি দর পতনে ছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯.৭৯ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর পতনে এস্কয়ার নিটের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.০৫ শতাংশ। আর ২ টাকা ৯০ পয়সা বা ৮.০৫ শতাংশ দর কমেছে উসমানীয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের। এ ছাড়া দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে- গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের ৬.৪৭ শতাংশ, এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের ৫.৬৬ শতাংশ, শাহজিবাজার পাওয়ারের ৫.৫৬ শতাংশ, সোনালি আঁশের ৫.৩২ শতাংশ, নিউলাইন ক্লোথিংসের ৫ শতাংশ, আরামিট সিমেন্টের ৪.৯৫ শতাংশ এবং সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডের শেয়ার দর ৪.৮৪ শতাংশ কমেছে।
ব্লক মার্কেটে ১৮.৯১ লাখ শেয়ার ট্রেড : এ দিকে গতকাল ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ২৯টি কোম্পানির ১৮ লাখ ৯১ হাজার ১৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল মোট ১১ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে এর মধ্যে আট কোম্পনির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। ওই আট প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিগুলো হলো- বিচ হ্যাচারি, ইবনে সিনা ফার্মা, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, রেনাটা লিমিটেড, সোনালি আঁশ ও ফাইন ফুডস লিমিটেড। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিচ হ্যাচারির। কোম্পানিটির চার কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

চট্টগ্রামে সব সূচকের পতন : দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রামে ঠিক উল্টোচিত্র। ঢাকায় সূচক বাড়লেও এখানে পয়েন্ট খোয়া গেছে। সিএএসপিআই ৩৫.০৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ১৭.৬৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৫.৫৪ পয়েন্ট কমেছে। ১৯৪টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিরেও দর পতনের শিকার ৯৭টির, দর বেড়েছে ৭০টির এবং দর অপরিবর্তিত ২৭টির। ১৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট চার কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৮০ টাকা বাজারমূল্যে। মঙ্গলবারের চেয়ে এই লেনদেন আট কোটি ২৬ লাখ টাকা কম। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি।
সিএসই শরিয়াহ সূচকে কোম্পানিগুলোর সমন্বয়: এ দিকে সিএসইর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিএসই শরিয়াহ ইনডেক্স চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন করে কোনো কোম্পানিকে যুক্ত করা হয়নি। তবে আগের তিনটি কেম্পানিকে বাদ দেয়া হয়েছে। মোট ১২৩টি কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যা আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে কার্যকরী হবে। এ দিকে বাদ যাওয়া তিন কোম্পানি হলো- হেইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লি., রিজেন্ট ট্যাক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লি.।


আরো সংবাদ



premium cement