১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মুনাফা তুলে নেয়ায় বিক্রির চাপে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব

-

- বিক্রির চাপ ৫৩ শতাংশ এবং কেনার চাপ ৪৭ শতাংশ
- লেনদেন কমেছে ১৮৮ কোটি টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক পুঁজিবাজারে মূলধনী মুনাফার ওপর করের হার কমানো আর লভ্যাংশ বিতরণ-উৎসে কর কর্তন সার্টিফিকেট ইস্যুকরণে বিএসইসির নির্দেশের সোমবার এবং মঙ্গলবার বড় উত্থান ঘটে। দুই দিনে শেয়ারবাজারের সূচক ১৭৫ পয়েন্ট বাড়ে। দুইদিন পুঁজিবাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে গত দুই দিন যেখানে কেনার চাপ ছিল ৯০ শতাংশের বেশি সেখানে বিক্রির চাপ আগের দিনের ৮ শতাংশ থেকে ৫৭ শতাংশে চলে আসে। কেনাবেচার চাপ সমান সমানে চলে আসে। বি শ্রেণীর শেয়ারের কোনো ক্রেতাই ছিল না। লেনদেনের সূচনায় ইতিবাচক থাকলেও মুনাফা তুলে নেয়ার কারণে দর পতনের শিকার হয় বেশির ভাগ কোম্পানি। ডিএসইর লেনদেনও আগের দিনের তুলনায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে বাজারমূলধন ডিএসইর কমেছে ৩৫৯ কোটি টাকা।

দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরুতে বাজার ভালোই ছিল। উত্থান পতনেও ১২টা ৪ মিনিটে ডিএসইএক্স সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪১১.২ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এর আগের লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ১.৫৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ২.৯৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক শূন্য দশমিক ০৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করে। ওই সময়ে ডিএসইতে মোট ২৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

আর দিন শেষে ডিএসইএক্স মঙ্গলবারের চেয়ে সূচক ১৭.৯৩ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৩৪৭.০৮ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ০.০১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৬৭.৭৫ পয়েন্টে নেমে আসে। তবে ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ০.৯৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৯২.৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনকৃত ৩৯৯টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৫টির বা ২১.৩০ শতাংশ, দর কমেছে ২৮১টির বা ৭০.৪২ শতাংশ এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার। গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৯টি কো¤পানির ২৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫৫১ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার ৮০৬ টাকায়। মঙ্গলবার যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৮৩৯ কোটি টাকার। ফলে লেনদেনে কমেছে ১৮৮ কোটি টাকা। বাজারমূলধন একদিনেই কমেছে ৩৫৯ কোটি টাকা।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০: ডিএসইতে টাকায় লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো- ওরিয়ন ফার্মা, বিএসসি, ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা অয়েল, ফারইস্ট নিটিং, ওরিয়ন ইনফিউশান, জিপি, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ও ব্র্যাক ব্যাংক। দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো- ওরিয়ন ফার্মা, ফু-ওয়াং ফুড, এসএস স্টিল, ওরিয়ন ইনফিউশান, কে অ্যান্ড কিউ, সিএপিএম আইবিবিএল মি. ফা., পদ্মা অয়েল, আইসিবি এএমসিএল সোনালি ব্যাংক ১ম মি. ফা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। আর দর পতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো- প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মি. ফা., এনটিসি, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, ডেল্টা লাইফ ইন্সু:, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, প্রাইম ফাইন্যান্স, জিলবাংলা সুগার মিল, সিলভা ফার্মা, গ্রিনডেল্টা মি. ফা. ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যু:।

ব্লক মার্কেটে ১৭.৪৫ কোটি টাকার ট্রেড: আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৯টি কোম্পানির ৩৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৩২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকায়। এখানে দশ কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। এই দশ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকারও বেশি।কোম্পানিগুলো হলো- ওরিয়ন ইনফিউশন, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, ইউনিক হোটেল, বিচ হ্যাচারি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেক্সিমকো, রিলায়ান্স ওয়ান দ্য স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড এবং এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের। কোম্পানিটির ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ২ লাখ ৪০ লাখ ৩৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিমের ২ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকার, ইউনিক হোটেলের ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, বিচ হ্যাচারির ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৩৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার, বেক্সিমকোর ৩১ লাখ ৪২ হাজার টাকার, রিলায়ান্স ওয়ান দ্য স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের ২৫ লাখ ৯ হাজার টাকার এবং এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ১৬ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

সিএসইতে শতাধিক কোম্পানি দর পতনে: চট্টগ্রাম স্টকেও গতকাল মিশ্রভাব ছিল। শতাধিক কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়। লেনদেনও আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। সিএসসিএক্স ৮.৬৪ পয়েন্ট কমলেও সিএসই-৩০ সূচক ৬.১৫ পয়েন্ট এবং সিএএসপিআই ২.৬৯ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৭টি কোম্পানির মধ্যে দর পতনের শিকার ১০৪টি, দর বৃদ্ধিতে ৮০টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির। ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৬৬০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট পাঁচ কোটি ২১ লাখ ২৭ হাজার ৯৭১ টাকা বাজারমূল্যে। যেখানে মঙ্গলবার লেনদেন হয় ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। ফলে লেনদেনে কমেছে ৭৮ লাখ টাকার।

দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ডিএসইর সতর্কতা: এ দিকে তালিকাভুক্ত মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মনিটরিংয়ে উঠে এসেছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়া উচিত বলে প্রতিষ্ঠানটি সতর্কবার্তা জারি করেছে। ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়।
ডিএসইর চিঠির উত্তরে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ৫ নভেম্বর জানিয়েছে, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৮ অক্টোবর মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দাম ছিল ২১ টাকা ৭০ পয়সায়, যা ৫ নভেম্বর লেনদেন শেষে ক্লোজিং দাম হয়েছে ৩০ টাকা ৪০ পয়সায়। কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছে ডিএসই।

 


আরো সংবাদ



premium cement