দীর্ঘ মন্দার জালে আটকে যাওয়ার শঙ্কায় পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৫
- ৫১০০ পয়েন্টের সীমানায় ডিএসইর সূচক
- দরপতনে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা
- বিক্রির চাপ ৭৬ শতাংশ
পতনের অব্যাহত ধারায় সূচক কমে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে দেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘ মন্দার জালে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা। পট-পরিবর্তনের পর গত ১২ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ডিএসইর সূচক কমেছে ৯০১ পয়েন্ট। দীর্ঘ প্রায় পৌনে তিন বছর পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে চলতি বছর ১১ জুন ডিএসইর সূচক নেমে যায় ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে। আর গতকালের ৫৫.১৯ পয়েন্টসহ দুই দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ১২৭.১৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। ফলে এখন সূচক ৫১০০ পয়েন্টের সীমান্ত রেখায় অবস্থান করছে। বাজারে এখন বড় আকারে সেল প্রেসার নেই। এখন কিছু কিছু ব্রোকারেজ হাউজ কিছু পরিমাণ হলেও ফোর্স সেল চলছে। বিপরীতে বাড়তি কেনার চাপ নেই। যে কারণে বাজার প্রতিদিনই সূচক নিচে নামছে বলে অনেকের অভিমত। তবে রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, গতকালও ২৪ শতাংশ ক্রয় চাপের বিপরীতে বিক্রির চাপ ছিল ৭৬ শতাংশ। আর ডিএসইতে বাজার মূলধন আরো ০.৫৩ শতাংশ কমেছে।
দুই বাজারের দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা স্টকের লেনদেন শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে শেষ পর্যন্ত বাজার নেতিবাচক ছিল। মাঝে দু’একবার ওঠার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আরো ৫৫.১৯ পয়েন্ট হারিয়েই দিনের লেনদেনের ইতি টানতে হলো। তবে প্রথম এক ঘণ্টায় তিন কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার ২৪৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মাত্র ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকায়। এই সময় ২৪৭টি কোম্পানি দর পতনের শিকার ছিল। যেখানে মাত্র ৭৬টি কোম্পানির দর বেড়েছে।
দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৫৫.১৯ পয়েন্ট কমে এখন ৫ হাজার ১১৪.৫৯ পয়েন্টে, ‘ডিএসইএস’ ১৮.৬৩ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ১৪৪ পয়েন্ট এবং ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ১৩.৫৯ পয়েন্ট হারিয়ে এখন এক হাজার ৮৭৯.১৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। গতকাল ডিএসইতে বারো কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট ৩০৬ কোটি এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা বাজারমূল্যে হাতবদল হয়েছে। যেখানে বুধবার লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হজার টাকার। ফলে লেনদেনে কমেছে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। যার মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টির বা ২১.০১ শতাংশের, কমেছে ২৭২টির বা ৬৮.৮৬ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টির। বাজার মূলধন ০.৫৩ শতাংশ কমে এখন ছয় লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ কোটি ২১ লাখ টাকায় নেমেছে।
ব্লক মার্কেটে ১৪.৬৩ কোটি টাকার লেনদেন : এ দিকে, ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৯টি কোম্পানির মোট ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ছয় কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, বেক্সিমকো, এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স, খান ব্রাদার্স, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্যাংক এশিয়ার। ব্যাংকটির তিন কোটি ৬৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বেক্সিমকোর এক কোটি ৯৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্সের এক কোটি ৪২ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- খান ব্রাদার্সের ১ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকার এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ৭৮ লাখ ৮২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে সর্বোচ্চ দর বেড়েছে রানার অটোমোবাইলস পিএলসির। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৭২ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা পূবালী ব্যাংকের দর বেড়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯.৬৩ শতাংশ। আর ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৬.৭৮ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়েছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড লিমিটেডের। এ ছাড়া, ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফারইস্ট নিটিংয়ের ৬.২৫ শতাংশ, খান ব্রাদার্সের ৫.৮৬ শতাংশ, ইভিন্স টেক্সটাইলের ৫.৫৫ শতাংশ, ইনডেক্স এগ্রোর ৪.৬৯ শতাংশ, আর্গন ডেনিমসের ৪.৪৮ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ৪.২০ শতাংশ এবং এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির ৩.৯৬ শতাংশ দর বেড়েছে।
দর পতনের শীর্ষে ১০: অন্য দিকে, ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ১৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৯৮ শতাংশ কমেছে। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৫৬ শতাংশ। আর ৫ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮.৫০ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। এ ছাড়া, ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সুরেন্সের ৮.৮৮ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের ৮.৭০ শতাংশ, নিউলাইন ক্লোথিংসের ৭.৮৯ শতাংশ, জিল বাংলা সুগার মিলসের ৭.৭১ শতাংশ, এটলাস বাংলাদেশের ৭.৪৫ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৭.৪৪ শতাংশ এবং আরমিট সিমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার দর ৭.২৫ শতাংশ কমেছে।
সিএসইতে সূচক পতনে সেঞ্চুরির হিড়িক: চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে গতকাল সবগুলো সূচকই সেঞ্চুরির বেশি হারে পয়েন্ট কমেছে। ৭০.৬৫ শতাশ কোম্পানির শেয়ার দরপতনের শিকার। প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৯৯.৭০ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১৪ হাজার ৩০২.৫৯ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ১২৪.৮৭ শতাংশ কমে আট হাজার ৭০৫.৬৯ পয়েন্টে, সিএসই-৩০ সূচক ২৪৫.৬৪ পয়েন্ট কমে এখন এগারো হাজার ৭৩৯.৩৫ পয়েন্টে চলে এসেছে। এ ছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১৫.০৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই ১১.৫১ পয়েন্ট কমেছে। ১৮৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বৃদ্ধিতে মাত্র ৩৯টি, দর পতনের শিকার ৭০.৬৫ শথাংশ বা ১৩০টি এবং দর অপরিবর্তিত ১৫টি। ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট চার কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪৫ টাকা বাজারমূল্যে। যা বুধবারের তুলনায় এক কোটি ৩ লাখ টাকা বেশি। বাজর মূলধন এখন কমে ছয় লাখ ৯২ হাজার ২০৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
জেড’ থেকে ‘বি’ শ্রেণীতে আরো দুই কোম্পানি : তালিকাভুক্ত আরো দুই কোম্পানির বি শ্রেণীতে উন্নতি হয়েছে। কোম্পানি দুটি অর্থবছরের ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করায় ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানি দুটি হচ্ছে, একমি পেস্টিসাইডস এবং বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। একমি পেস্টিসাইডস ৩০ জুন,২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ০.১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। অন্য দিকে, ৩০ জুন ২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য বিচ হ্যাচারি ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে। ডিএসই জানিয়েছে, আগামী রোববার থেকে কোম্পানিগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করবে। তবে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের কারণে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কোম্পানি দুটিকে ঋণ সুবিধা দিতে ব্রোকার হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংককে নিষেধ করেছে ডিএসই।
রয়্যাল ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিয়াল পোর্টালের বিশ্লেষণ: পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত। মাসের শেষকে সামনে রেখে সূচক টেকনিক্যাল ডিমান্ড জোনে প্রবেশ করেছে। ডিএসইএক্স ৫৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১১৪ পয়েন্টে শেষ হয়। অপর দিকে, বাজার লেনদেন ১৫ কোটি টাকা কমে ৩০৬ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী ছিল এবং মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৫৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ৫ শতাংশ এবং টার্নওভার ৫ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৮টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১৪.৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৪.৭৮ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৮.৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২.৫ কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম।