তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে কৃষ্ণচূড়া সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়েছে
- উত্তম গোলদার, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)
- ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৩১, আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৪৯
কাঠফাটা রৌদ্রের তীব্রতর তাপদাহ উপেক্ষা করেই কৃষ্ণচূড়া তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে হাজির হয়েছে! গ্রীষ্মের এই রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। লাল আবির মাখা প্রেমের চিরন্তন আবেশ নিয়ে হাজির কৃষ্ণচূড়া। যে দিকে চোখ যায় সবুজের মাঝে শুধু লাল রঙের মূর্ছনা। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙ্গের সাজ দেখে দু’চোখ জুড়িয়ে যায় প্রকৃতিপ্রেমীদের। চোখে নেমে আশে প্রশান্তি। এ যেন প্রকৃতিজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার মন জুড়িয়ে দেয়া। এই সময়টায় সারাদেশের মতোই পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জেও চোখধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি।
দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য।
কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর, তা কম লোকই জানেন। কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, এই ফুল ফুটে প্রতিটি গাছ লালে লাল হয়ে আছে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লাবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় আট সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে।
বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি আর বহু আন্দোলনের পটভূমির সাথে কৃষ্ণচূড়া গাছের সম্পর্ক খুব নিবিড়। শোভাবর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। শখের বশে এ গাছের কদর থাকলেও; এর কাঠ তুলনামূলক দামি না হওয়া এবং ভালো কোনো ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে স্থানীয়দের আগ্রহ অনেক কম।
উপজেলার প্রতিটা গ্রামে এখন কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় লাল হলুদ ফুলের সমারহ। কৃষ্ণচূড়া গাছ খুব একটা বড় হয় না। তবে এর ডাল পালা বট গাছের মতো অনেক জায়গা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। পরিবেশের সৌন্দর্যবর্ধক বৃক্ষ কৃষ্ণচূড়া গাছ বর্তমানে উপজেলার রাস্তার দুই ধারে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পোষ্ট অফিসের সামনে ও উপজেলা পরিষদের আঙ্গিনায় শোভা পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো: আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দেয়া কৃষ্ণচূড়ার নাম Delonix regia। কিন্তু বাংলায় এসে বদলে নাম হয়েছে 'কৃষ্ণচূড়া'। কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল, কমলা, হলুদ ফুল এবং উজ্জল সবুজ পাতা একে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।
ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার দু'পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো হলে এ সময় ফুল ফুটে লালে লাল হয়ে যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা