২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভোলায় জোয়ারে প্লাবিত ১০ গ্রাম : পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ

ভোলায় জোয়ারে প্লাবিত ১০ গ্রাম : পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ। - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভোলার মনপুরায় নিম্নচাপ, ঝড়ো বাতাস ও পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলসহ মূল ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল। গত পাঁচ দিন ধরে ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া উপজেলা সদরে সী-ট্রাক ঘাট পানিতে ডুবে গেছে। এতে করে উপকূলজুড়ে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় রয়েছে।

রোববার দুপুর ৩টার দিকে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহমান।

তিনি জানান, বিপৎসীমার সর্বোচ্চ উচ্চতায় মেঘনার পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল পাঁচ থেকে ছয় ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।

এ দিকে মনপুরা উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন নতুন ইউনিয়ন কলাতলীর অধিকাংশ এলাকা আনুমানিক ছয় ফুটের ওপরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে মোবাইলফোনে নিশ্চিত করেন ইউপি সদস্য আবদুর রহমান।

তিনি জানান, দিনে-রাতে দু’বেলা জোয়ারে পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে জোয়ারের পানি ঘরে প্রবেশ করছে। তখন পানি থেকে বাঁচতে কেউ খাটের উপর, আবার অনেকে জলোচ্ছ্বাস মনে করে ঘরের টিনের চালের উপর আশ্রয় নেয়।

এ ছাড়াও মনপুরা থেকে বিচ্ছিন্ন চরনিজাম, ঢালচর, চর শামসুদ্দিন ও বদনার চর জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই সমস্ত অঞ্চলে বসবাসরত ২০ হাজারের ওপরে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সবার মধ্যে জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বলে মোবাইলফোনে জানিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট গ্রাম জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। ওই গ্রামের প্রত্যেক ঘর ও মসজিদে পানি প্রবেশ করেছে। গত পাঁচ দিন ধরে ওই এলাকার মানুষ রান্না করতে না পারায় অর্ধহারে অনাহারে দিন যাপন করছে।

এ ছাড়াও ওই ইউনিয়নের চরযতিন, সোনারচর, চরজ্ঞান, চরফৈজুদ্দিন গ্রামের দক্ষিণ মাথা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে উপজেলা সদরে সী-ট্রাক ঘাট এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।

অপর দিকে উপজেলার ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের কুলাগাজী তালুক, আন্দিরপাড়, পশ্চিম আন্দিরপাড়, ঈশ্বরগঞ্জ ও কাউয়ারটেক ঢাকাগামী লঞ্চঘাট এলাকা পাঁচ থেকে ছয় ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছ।
পাশাপাশি উপজেলার ৩ নম্বর উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলমনগর ও উত্তর সাকুচিয়া গ্রামের মাস্টারহাট এলাকার পশ্চিম এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এই সমস্ত এলাকার বাসিন্দারা গত পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

দুর্গত এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, গত পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটছে। তবে রোববার পানি সবচেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ায় জলোচ্ছ্বাস আতঙ্ক কাজ করছে।

তারা আরো জানান, ভাটায় পানি নেমে যাওয়ার পরে ফের জোয়ারে পানি বাড়ে। এতে দিনে-রাতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। কোনোমতে শুকনো খাবার খেয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।

হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার ও মনপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আমানত উল্লাহ আলমগীর জানান, মূল ভূখণ্ডের ভিতরে ও বাইরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার দাবি জানান তারা।

মনপুরা উপজেলার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাসন উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল-নোমান জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement