২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ’বীর নিবাসের’ মান খারাপের অভিযোগ

ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ’বীর নিবাসের’ মান খারাপের অভিযোগ। - ছবি : নয়া দিগন্ত

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ’বীর নিবাসের’ মান খারাপ করেছে বলে অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

মঙ্গলবার মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আয়োজনে উপজেলা অডিটরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে শেষ জীবনে একটি শান্তির আশ্রয়ের জন্য সরকার ’বীর নিবাস’ নামে একটি ঘর প্রদান করেছেন। সে সকল ঘরের নির্মান কাজের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার তিন থেকে ছয় মাস, কোনোটার এক বছর আবার কোনোটার দেড় থেকে দুই বছর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘর থাকার উপযোগী করে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। যে কয়টির কাজ শুরু বা অর্ধেক কাজ হয়েছে তার মানও খারাপ।

সভায় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খান এনায়েত করিম সভাপতিত্ব করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তাফা বাচ্ছু হাওলাদার, ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার সরোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাইজুর রশিদ খশরু জোমাদ্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী বাহাদুর খান, মোঃ সেলিম পঞ্চায়েত, বজলুর রশিদ মৃধা, আব্দুল কাদের মুন্সি, রমেন দত্ত, মোঃ হাবিবুর রহমান, মানিক সিকদার, মোঃ শাহাবুদ্দিন, সন্তান কমান্ডের শিমুল রেজা প্রমুখ।

এ সময় মঞ্চে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক সিকদার, জাতীয় পার্টি-জেপির উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, থানার ওসি তদন্ত মোঃ মেহেদী হাসান এবং পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ও তদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নির্মাণ সামগ্রীর মানের বিষয়ে কথা বললে ঠিকাদার বলেন, বেশি কথা বললে কাজ করবে না বলেও সভায় অভিযোগ করেন অনেক বীর নিবাস প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তারা বলেন, এই ঘরের ডিজাইনসহ সংশ্লিষ্ট পরিপত্রের একটি সেট প্রতি ঘর মালিকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেয়া হয়নি। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের পদাধীকারবলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি পদে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে চাইলে তিনি সমাজসেবা অফিস থেকে সরবরাহ করার কথা বলেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, আপনারা অনলাইন থেকে বের করে নেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এ ধরনের আচরণ স্বাধীন দেশে কাম্য কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, দুঃখের বিষয় হলো সরকার কর্তৃক বরাদ্ধকৃত ঘরের কখন টেন্ডার হয়, কখন লটারী হয় তার কিছুই জানেন না মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর এ কাজ জেলা, উপজেলার পর তিন হাত পরিবর্তন হয়ে চতুর্থ দফায় প্রাপ্ত ঠিকাদার ওই ঘরের নির্মান কাজ শুরু করে। তারা কাজ শুরু করার পরে যার অনুকূলে ঘর বরাদ্ধ হয় তাকে বা তার পরিবারকে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী অসাধু ঠিকাদার বলেন, এটি মজবুত করে করতে হলে আপনাদের কিছু সিমেন্ট, বালু বা লেবারদের খাওয়াতে হবে। যারা তা মানতে পারে তাদের কাজ দ্রুত হয় আর যারা মানতে না পারে তাদের কাজ পড়ে থাকে। যেটা স্বাধীন দেশে কাম্য নয়।

তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা বিএনপি সরকারের সময় নাম মাত্র হলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে স্বীকৃতী এবং সম্মান দিয়ে ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি বীর নিবাস নামে একটি ঘরের ব্যবস্থাও করেছেন। যা পর্যায়ক্রমে সকল মুক্তিযোদ্ধারা পাবেন।

প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা সভায় বক্তারা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রনিধি, সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আনার জন্য স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্তে স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের সম্পৃক্ততা এবং বীর নিবাস গড়তে ঠিকাদার নয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।

পরে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক কাজ তদারকি করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ওই সভায়।


আরো সংবাদ



premium cement