২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সফল নিলীমা রানী

- ছবি - নয়া দিগন্ত

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো বারী-৮ চাষ করে সফল হয়েছে কৃষানী নিলীমা রানীসহ আরো কয়েকজন কৃষক-কৃষানী। টমেটোর ফলন দেখে তারা খুব খুশি। তাদের এই সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক গ্রীষ্মকালীন চমেটো চাষ করতে আগ্রহী প্রকাশ করেছেন বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এটি একটি উচ্চ তাপ সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল গ্রীষ্মকালীন জাত। আকর্ষণীয় লালবর্ণ বিশিষ্ট এর ত্বক এবং শাঁস। ফল বেশ মাংশল। প্রতিটি গাছে গড়ে ৪০-৪৫টি ফল ধরে। প্রতি ফলের গড় ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। ফলের আকৃতি চ্যাপ্টা গোলাকার ধরনের। জীবনকাল ১০০-১২০ দিন।

উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কিসমত ছৈলাবুনিয়া গ্রামের নিলীমা রানী ও তার স্বামী গনেষ হাওলাদার গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তাদের ক্ষেতে ফল আসতে শুরু করেছে।

এই দম্পতি জানান, জমি প্রস্তুত, পলিথিনের ছাউনি, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ যে টাকা খরচ হয়েছে। তার বেশিরভাগ বহন করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এপ্রিল থেকে জুন মাস বীজ বপনের সময়। ৪-৫টা চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে জমি তৈরি করতে হয়। ভালো ফলন ও চারার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হবে। ছাউনির উচ্চতা মাঝখানে ৬ ফুট ও দুই পাশে ৪.৫ ফুট এবং দুটি ছাউনির মাঝে ৫০ সেমি চওড়া নালা রাখতে হবে, যাতে ছাউনি থেকে নির্গত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। আর আট থেকে দশ দিনের মধ্যে বাজারজাত করতে পারবো টমেটো।

উপজেলার গাবুয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী কৃষক মোঃ ইউনুচ মিয়া বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। আমি খুলনার দৌলতপুরে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমি বিভিন্ন গাছের চাড়া কাটিংও করতে পারি। গ্রীষ্মকালীন টমেটো সাধারণত শীত মৌসুমে আমরা পেতাম। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় প্রথমবার পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছি। গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমান বাজারে ৮০ থেকে ১শত টাকা টমেটো বিক্রি করতে পারবো আশা করছি।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩৫ জন কৃষক-কৃষানীকে এবং চারজনকে প্রদশর্নীর মাধ্যম্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারী-৮ জাতের দুই ধরনের চারা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি প্লটে দুই ধরনের নরমাল চারা ও গ্রাফটেড চারা রোপন করা হয়।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসাঃ নাসরীন সুলতানা জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। কৃষি অফিস কৃষকদের টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, সাধারণত মার্চ মাসের প্রথম দিকে বীজ বপন করতে হয় এবং মে মাসে ওই চারা ক্ষেতে রোপন করতে হয়। একাধারে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যাবে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আরাফাত হোসেন জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায়ে মির্জাগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ উপযোগী। টমেটো সাধারনত শীতকালীন ফসল। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কিছু গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বারি-৮ জাত আবিস্কার করেন। সারিবদ্ধভাবে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারী-৮ জাতের টমেটো রোপন করতে হয়। যে কয়টি প্রদশর্নী দেয়া হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। এ কারণে দেশে গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে কৃষি বিভাগ থেকে নানা প্রণোদনাসহ সব সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সারা বছর সবজির চাহিদা পূরণ করতে গ্রীষ্মকালীন উদ্ভাবিত বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করতে পরামর্শ দেন কৃষি বিভাগ।


আরো সংবাদ



premium cement