২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বরগুনায় ‘নৌকার সমর্থকরা এলাকাছাড়া’

-

বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পতাকাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেনের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরাজিত আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে নৌকার সমর্থকরা অনেকেই এলাকাছাড়া হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই নৌকার নেতাকর্মীদের ওপর এই হামলা চালানো হচ্ছে বলে পরাজিত নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক অভিযোগ করেছেন।

তবে হামলার বিষয় স্বীকার করে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের দাবি, ঘটনা যা ঘটছে তার চেয়ে একটু বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। বুধবার তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমার কর্মী-সমর্থকদের কোথাও আর কোনো হামলা না করার নির্দেশ দিয়েছি। হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে থানা পুলিশ বলছে, এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটছে কি না ‘আমাদের জানা নেই’।

ওই ইউনিয়নের নৌকার কর্মী-সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, সোমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হচ্ছে। হামলা থেকে রক্ষার জন্য নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বাড়িছাড়া। অনেকে আবার বাড়িতে অবরুদ্ধ রয়েছেন।

তারা জানান, আয়লা পতাকাটা ইউনিয়নের যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছিলেন। তার বড় ভাই বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মোশারফ হোসেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বরগুনা সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে সোমবার প্রথম ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তথ‍্য ও গবেষণা সম্পাদক মুজিবুল হক। তার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোশারফ হোসেন। নির্বাচন চলাকালীন বেশ কয়েকবার নৌকার কর্মী সমর্থকদের ওপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকদের হামলার ভয়ে ইউনিয়ন ছাড়া হচ্ছেন নৌকার কর্মী-সমর্থকরা। নতুন করে হামলার ভয়ে হামলার শিকার অনেকে মুখ খুলতেও চাচ্ছেন না। তাই এ পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পরাজিত প্রার্থী মুজিবুল হক।

ইউনিয়নের সোনার বাংলা বাজারে ওষুধ ব্যবসায়ী কবির হোসেনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের আগে ও পরে হামলা চালানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি বাড়িতে অবরুদ্ধ। গোলাম কবির মুঠোফোনে অভিযোগ করেন, নৌকার পক্ষে নির্বাচন করা ও নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হচ্ছে। বিজয়ী চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা হুমকি দিচ্ছেন, ‘যারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন ও নির্বাচন করেছেন তাদেরকে ইউনিয়নে থাকতে দেয়া হবে না।’

এখন তিনি বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। নৌকার নির্বাচন করে এখন জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন গোলাম কবির।

ওই ইউনিয়নের পূর্ব কেওড়াবুনিয়া এলাকার আবদুস সাত্তারকে মারধর করেছেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের সমার্থকরা। মারধরে গুরুতর আহত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। আবদুল সাত্তারের ভাই আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমার ভাইকে ঘোড়া প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কাজী শামসুল হক বলেন, ‘আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নে বর্তমানে অরাজকতা চলছে। নৌকার কর্মী-সমর্থক ঘরবাড়ি হামলা চালানো হচ্ছে। তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। গবাদি পশু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নটি এখন একটি আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুল হক বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন মধ্যরাত থেকেই মোশারফ হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। অসংখ্য নারী-পুরুষকে মারধর করা হয়েছে। তাদের মারধরে আহত হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইউনিয়নের কোনো মানুষ এখন নিরাপদ নেই। মোশাররফ হোসেনের সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন এলাকার মানুষ।

পরাজিত নৌকার প্রার্থী আরো বলেন, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের বড় ভাই বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। সেই থেকেই তারা নৌকার বিপক্ষে প্রতি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করাচ্ছেন।

মারধরের কথা স্বীকার করে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যতটুকু ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি বলা হয়েছে। যতটা বলছে, ততটা হয়নি। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা আর না ঘটে এজন্য আমি আমার কমী-সমর্থকদের অনুরোধ জানিয়েছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু দাদা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করেছি, আর কোনো হামলার ঘটনা ঘটবে না।’

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হামলা হয়েছে কি না আমরা জানি না। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের

সকল