২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দারিদ্র্যতাকে উপেক্ষা করে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ

লালমোহনের ইশাদের স্বপ্ন পূরণ হবে তো

বাবা ইকবাল হোসেন (ডানে) ও মো: ইশাদ ইসলাম (বামে) - ছবি- সংগৃহীত

দারিদ্র্যতা উপেক্ষা করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মো: ইশাদ ইসলাম। বাবা মো: ইকবাল হোসেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন তিনি। লালমোহন পৌরসভার নয়ানি গ্রামে তাদের বাড়ি। ইকবাল হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। সন্তানদের পড়ার খরচের জন্য রাতেও কাজ করেন তিনি।

এ বছর বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন একমাত্র ছেলে ইশাদ। ভাই বোনদের মধ্যে ইশাদ দ্বিতীয়। বড় বোন ইশরাত জাহান ভোলা সরকারি কলেজে অনার্স পড়েন। তার আরেক বোন আবিরা এশা এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর সবার ছোট বোন মহুয়া আক্তার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

ইশাদ ইসলাম মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি ও ২০২০ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি প্রতিটি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পান ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায়ও। তবে ভর্তির সুযোগ পেলেও ডাক্তারি পড়া ও এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির খরচ জোগান তার বাবার জন্য কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। বাবার সামান্য আয়ে সংসারের খরচের পাশাপাশি চার ভাইবোন পড়ালেখা করছেন। ফলে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেলেও স্বপ্ন পূরণ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার মাঝে। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে তো? এমন প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে তার হৃদয়ে।

ইশাদ জানান, লক্ষ্য ছিল মেডিক্যালে পড়ব। একজন চিকিৎসক হব। মা-বাবা অনেক কষ্ট করে আমার পড়ার খরচ চালিয়েছেন। তাদের অনেক আশা ছিল আমাকে নিয়ে। আমিও চেষ্টা করেছি। তাদের অর্থ যেন বিফলে না যায়। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও নামাজ ছাড়া দিনের বাকি সময়টুকু পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করতাম। লকডাউনের পুরো এক বছর বাসায় পড়তাম। এইচএসসিতে অটো পাস দেয়ায় নিজের কাছে ভালো লাগলো না। তখন নিজেকে আরো বেশি প্রমাণ করতে পড়ালেখার গতি বাড়িয়ে দিলাম। যাতে কেউ অটো পাস নিয়ে কথা বলতে না পারে।

ইশাদের বাবা ইকবাল হোসেন বলেন, আমি সামান্য একজন কর্মচারী। স্কুলে গেলে আমি দাঁড়িয়ে থাকি। আমি চাই আমার ছেলেমেয়েরা যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। তারা নিজেদের যোগ্যতায় যোগ্যতম স্থানে বসে। আমি ইশাদের স্কুলে যাওয়ার সময় তার ব্যাগ কাঁধে করে বহন করতাম। ব্যাগের বইয়ের ওজন যেন তার কষ্ট না হয়। মাঝে মধ্যে আমি অসুস্থ হলে বা ঝড়বৃষ্টি এলে ইশাদকে স্কুলে যেতে বারণ করতাম। কিন্তু ছেলে শুনত না। একদিন স্কুলে যেতে না পারলে কান্নাকাটি করত। আমার সন্তানদের পড়ার খরচের জন্য রাতের বেলাও স্কুলের কাজ করেছি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। জমিও বিক্রি করেছি। তবুও ওদের পড়ার খরচের অভাব
বুঝতে দেইনি। ওদের সর্বোচ্চ পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনে আমি সব জমি বিক্রি করে দিয়ে হলেও ওদের স্বপ্ন পূরণ করব।

ইশাদের মা জেসমিন গৃহিনী। তিনি বলেন, গভীর রাত পর্যন্ত ছেলে পড়ালেখা করত। আমি ওকে ঘুমাতে বললে ও বলত ‘তোমাদের কষ্ট যেদিন স্বার্থক হবে সেদিন আমি ঘুমাব’।

ইশাদ নিজের সফলতার পেছনে মা-বাবার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে জানান। ইশাদ চিকিৎসক হতে পারলে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করবেন বলে জানান। যাদের টাকা নেই তাদের ফ্রি চিকিৎসার পরিকল্পনা রয়েছে তার।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল