২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সন্তান বিক্রি করতে না দেয়ায় স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রীর মৃত্যু

ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভোলার আলীনগরে পাঁচ মাসের মেয়েকে বিক্রি করতে না দেয়ায় স্বামীর নির্যাতনে বিবি মরিয়ম (২৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার আলীনগর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: নিরব তার স্ত্রী মরিয়মকে নির্যাতন করেন। পরে শনিবার দুপুরে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

মরিয়মের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর আগে সদরের আলীনগর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: নিরবের সাথে ২ নং ওয়ার্ডের বিবি মরিয়মের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নিরব যৌতুকের জন্য মরিয়মকে মারধর ও নির্যাতন করতেন। স্বামীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে মরিয়ম প্রায় সময় বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতেন নিরবের হাতে। তাতেও সুখ আসেনি মরিয়মের সংসারে। স্বামী নিরব সংসারে তেমন বাজার-সদাই করতেন না। এতে না খেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতেন বিবি মরিয়ম। স্বামীর এই অত্যাচার-নির্যাতনের কথা মাকে জানাতেন মরিয়ম। মারধর ও নির্যাতনের বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে জানালে তারা নিরবকে ডেকে মিলেমিশে থাকার কথা বলেন। কিছুদিন ভালোভাবে কাটলেও আবারো শুরু হয় নির্যাতন।

পরিবার সূত্রে আরো জানা যায়, নিরব ও মরিয়মের ঘর আলো করে একটি মেয়ের জন্ম হয়। যার বয়স বর্তমানে পাঁচ মাস। ওই সন্তানের জন্মের কিছুদিন পর নিরব তাকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। মরিয়ম তাতে রাজি না হয়ে সন্তান বিক্রিতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিরব প্রায় সময় মরিময়কে মারধর করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার নিরব শিশুটিকে বিক্রি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। সন্তান বিক্রি করতে বাধা দেয়ার কারণে বিবি মরিয়মকে স্বামী নিরব এলোপাতাড়ি মারধর করেন।

এদিকে মারধরের একপর্যায়ে মরিয়ম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এসময় নিরব মরিয়মের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে চলে যান। জ্ঞান ফিরলে মরিয়মের চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তারা নিরবের মাকে মরিয়মের মুখে কী দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কদুর তেল দেয়া হয়েছে, কিছুই হবে না। পরে স্থানীয় লোকজন মরিয়মকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিবি মরিময় হাসপাতালে মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টীম হাসপাতালে গিয়ে মরিয়মের লাশ মর্গে পাঠান। এ ব্যাপারের মরিয়মের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্ততি চলছে বলে জানা যায়।

অভিযুক্ত মো: নিরবের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, মরিয়মের মৃত্যুর খবর শুনেছি। হাসপাতালে পুলিশের একটি টিম গিয়ে মরিয়মের লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা হলে বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement