আগুনমুখা নদীতে ফেরি না থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
- রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
- ২৫ অক্টোবর ২০২০, ২০:৪১
বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী উপজেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নৌদুর্ঘটনা। চলতি বছরের ১০ মাসে এ উপজেলায় আসা-যাওয়ার প্রধান নৌপথ আগুনমুখা নদীতে স্পীডবোট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করে বলেন, ফেরির ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক পথে যোগাযোগ নেই বলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত স্পীডবোটে নদী পারাপার হচ্ছেন যাত্রীরা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় একটি স্পীডবোট। আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন রুমেন-১ নামের যাত্রীবাহী ওই বোটটি রাঙ্গাবালীর কোড়ালীয়া থেকে গলাচিপার পানপট্টির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসময় ১৮ জন যাত্রীসহ আগুনমুখা নদীর মাঝখানে ডেউয়ের আঘাতে উল্টে যায় স্পীডবোটটি। তখন সাঁতার কেটে চালকসহ ১৩ জন নদীর পাড়ে পৌঁছাতে পারলেও বাকি পাঁচজন নিখোঁজ রয়ে যায়। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর শনিবার ভোরে ভাসমান অবস্থায়
রাঙ্গাবালী থানার পুলিশ কনস্টেবল মো. মহিবুল হক, কৃষি ব্যাংক বাহেরচর শাখার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, আশা ব্যাংকের খালগোড়া শাখার ঋণ অফিসার কবির হোসেন, দিনমজুর মো. ইমরান ও মো. হাসান মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে চলতি বছরেরর ৬ জানুয়ারি আগুনমুখা নদীতে পায়রা বন্দরের স্পীডবোটের সাথে আহমেদ এন্টারপ্রাইজের যাত্রীবাহী স্পীডবোটের সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী স্পীডবোটের ছয়জন যাত্রীসহ বোটটি পানিতে ডুবে যায়। পরে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও হারুন হাওলাদার ও আইয়ুব হাওলাদার নামে দু’জন যাত্রীর লাশ দুর্ঘটনার পরে দ্বিতীয় ও চতুর্থদিনে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, দেড়লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের সর্বদক্ষিণ তথা বঙ্গোপসাগরের পাদদেশের জনপদ রাঙ্গাবালী উপজেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগের বড় বাধা আগুনমুখা নদী। এই নদীতে ফেরি চালু না করায় সড়ক পথে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আগুনমুখা নদী বছরের মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত উত্তাল থাকে। এই সময়ে এলাকার মানুষকে বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
নৌপথে নদী পার হতে হয়। আর এ সুযোগে স্পীডবোট ব্যবসায়ীরা বিআইডব্লিউটিএ থেকে আগুনমুখা নদীর পানপট্টি থেকে কোড়ালিয়া ও বোয়ালিয়া থেকে কোড়ালিয়া স্লুইস ঘাট পর্যন্ত চলাচলের দু’টি রুট পারমিট নিয়ে তাদের ইচ্ছেমতো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ফিটনেসবিহীন স্পীডবোট দিয়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া, লাইফজ্যাকেট ব্যবহার না করাসহ বিভিন্ন রকম অনিয়ম করে যাচ্ছেন। যার ফলে
প্রতিনিয়ত ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনাসহ প্রানহাণি।
পটুয়াখালী নদী বন্দরের পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান জানান, ‘ওই রুটে চলাচলের জন্য দু’টি প্রতিষ্ঠানের ১২টি স্পীডবোটকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। বিভিন্ন বোটের ধারণ ক্ষমতা বিভিন্ন রকমের হলেও ভাড়া ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু যে বোটটি গত বৃহস্পতিবার আগুনমুখা নদীতে দুর্ঘটনার শিকার হয়, সেটির ধারণ ক্ষমতা ১২ জনের হলেও তারা নদীবন্দরের সতর্কতা সংকেত অমান্য করে দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ১৮ জন যাত্রী নিয়ে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নদী পথে গন্তব্য শুরু করে। যার কারণেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মনে আমরা ধারণা করছি।’
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটি-এর পক্ষথেকে মেরিন কোর্টে দুর্ঘটনার শিকার স্পীডবোটের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সতর্কতা সংকেতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ও ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে লাইফজ্যাকেট বিহীন চলাচলের করার দায়ে এ মমলা করা হয়।
এ দিকে বাহেরচর শাখা কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন রাঙ্গাবালী থানায় চালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি তার দুই সহকর্মীসহ দুর্ঘটনার শিকার ওই স্পীডবোটে ছিলেন। দেলোয়ার হোসেন ও ফোরকান মিয়া সাঁতার কেটে কিনারে উঠতে পারলেও তার সহকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান পানিতে ডুবে যায়। পরে ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরে মোস্তাফিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। চালকের ব্যর্থতাসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলী আহম্মেদ জানান, চালকসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের স্বার্থে আসামিদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছিনা। আসামি গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছেন।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এ রুটের স্পীডবোটগুলো নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়। এছাড়ও লাইফজ্যাকেট ব্যবহার না করে বিপৎসংকেত অমান্য করে স্পীডবোট চালায়। এ বিষয়টি আমি বিআইডব্লিউইটিএ কর্তৃপক্ষকে আগেও জানিয়েছি। আগুনমুখা নদীতে পানপট্টি- কোড়ালিয়া রুটে নদী পাড়াপাড়ের জন্য ফেরি চালু করা দরকার।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমান মহিব জানান, আগুনমুখা নদীর কোড়ালীয়া-পানপট্টি রুটে ফেরি চালুর জন্য আমি ডিউলেটার দিয়েছি। ঢাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবার যাবো। এছাড়াও সুযোগ পেলে বিষয়টি নিয়ে সংসদে উপস্থাপন করবো। আশাকরি অতি দ্রুত সময়ে ফেরি চালু হবে, ইনশাআল্লাহ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা