১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুলাদীতে মৎস্য চাষের বিপুল সম্ভাবনা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বরিশালের মুলাদী উপজেলা নদী বেষ্টিত একটি অঞ্চল। মুলাদীতে কিছু রাস্তা ঘাট ছাড়া অধিকাংশ জায়গা নীচু জমি। ধান আর পাটের মতো কিছু অর্থকরী ফসল সেখানকার এলাকাবাসীদের উপার্জনের মাধ্যম।

নীচু জমি কাজে লাগিয়ে মৎস্য চাষ করে অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে মুলাদীবাসী।

ওই উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদী ও চার হাজার ১৫০টি পুকুরসহ আরো অনেক বিল রয়েছে। সেখানে বর্ষার সময় চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রায় চার ফুট পানি জমে থাকে। এ সকল জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে এলাকার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলাম্বীও হওয়া যায়। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের পাশ দিয়েই নদী বয়ে গেছে। এ সকল এলাকায় বসবাসরত গ্রামবাসী অনায়াসেই এসব নদীতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, উপজেলা আড়িয়াল খাঁ ও জয়ন্তী নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোর গতি প্রকৃতি খাচায় মাছ চাষ ও পেনে মাছ চাষ করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আড়িয়াল খাঁ ও জয়ন্তী নদীর অনেক মরা খাল আছে যেগুলোতে কোনো নৌযান চলাচল করে না এবং সারাবছর ছয় থেকে সাত ফুট পানি থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে বা বৃহৎ পরিসরে প্রকল্প গ্রহণ করে খাঁচায় ও পেনে মাছ চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে মুলাদী উপজেলার জলাশয়গুলোকে সঠিক ব্যবহারে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর ফলে মুলাদী উপজেলায় মৎস্য চাষের সাথে সাথে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ ও সার্বিক অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে তিনি মনে করেন।

খাঁচায় মৎস্য চাষ ও পেন কালচার পদ্ধতি ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করলে প্রতিটি খাঁচার আয়তন হবে এক ঘন ফুট। প্রতিটি খাঁচায় ২৫০ থেকে ৩০০ পোনা চাষ করা যায়। পোনার আকার হবে তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খাবার বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হবে।

আবার মুলাদী উপজেলার তিনটি বড় নদী হলো, আঁড়িয়াল খাঁ, জয়ন্তী ও নয়া ভাঙ্গলী। তিনটি নদীর অনেক বাঁক রয়েছে। যেখানে পেন কালচার করা যায়। তাছাড়া অনেক প্রশাখা রয়েছে, যেখানে পেন কালচার করা সম্ভব। ওই পদ্ধতির জন্য নদীর প্রশাখার যে অংশ শুকিয়ে গেছে সেখানে ভালভাবে বাঁধ দিতে হবে। অন্য অংশে বাঁশের চালি বা গড়া দিয়ে বন্ধ করতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাছ ছেড়ে দিয়ে বর্ষার আগে হারভেস্টিং করলে অনেক লাভ পাওয়া যাবে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৩৫টি বিশাল খাল, যার আয়তন ২০ কিলোমিটার। উক্ত খালের অধিকাংশগুলোতে কোনো নৌ চলাচল করে না। খালগুলোতে জোয়ার ভাটার পানি ওঠানামা করে। ফলে উক্ত খালেও পেন কালচার করে লাভবান হওয়া সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে মাছকে কোনো সম্পূরক খাবার দিতে হবে না। প্রাকৃতিক খাবারের যে প্রাচুর্যতা রয়েছে, তা থেকেই প্রতি শতাংশ জলাশয়ে পাঁচ থেকে সাত কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়।

জানা গেছে, মুলাদীতে ছোট বড় প্রায় চার হাজার ১৫০টি পুকুর রয়েছে। যার আয়তন ১১০২ একর। উক্ত জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে প্রায় ৩৩০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হতে পারে। যেখানে বর্তমানে ১২০ টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুলাদী উপজেলায় বিলগুলো চিংড়ি চাষের উপযোগী। যেমন-চরপদ্মা আদর্শ মৎস্য খামার একটি উদাহরণ। এ ধরনের ঘের করে শুধু ফিন ফিশাই নয়, চিংড়িও অনায়াসে চাষ করা সম্ভব। এখানে চিংড়ির পোনার প্রাচুর্য রয়েছে। ফলে ভাল চিংড়ি পোনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করে একজন চাষী বছরে এক একর জমি থেকে এক লাখ টাকা আয় করতে পারে।

এছাড়া, মুলাদী উপজেলার আঁড়িয়াল খা নদীর অনেক অংশ মরে গেছে। যেমন-মীরগঞ্জ ঘাটের পূর্ব অংশ। এখানে অনায়াসেই একটি অভয়াশ্রম করে পাতারচর নদীর অভয়াশ্রমের পুনরাবৃত্তি করা যায়। এ ধরনের অভয়াশ্রম যেমন শতশত মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে, অন্যদিকে মাছের প্রাচুর্যতাও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

স্থানীয়দের মতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে উপজেলাকে মৎস্য চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করা সম্ভব। অপরদিকে সরকারের হাজার হাজার টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement