২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষায় বৈষম্য প্রথা বাতিলের দাবিতে বরগুনায় আলোচনা

শিক্ষায় বৈষম্য প্রথা বাতিলের দাবিতে বরগুনায় আলোচনা - নয়া দিগন্ত

শিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য অনুপাত প্রথা বাতিলের দাবিতে বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে বরগুনা টাউন হল এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট প্লাজার সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বক্তারা বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যক্তিকে সুন্দর সামাজিক জীবনে উপযোগী করে গড়ে তোলা। আর ব্যক্তিকে সুন্দর সামাজিক জীবনের জন্য উপযোগী করে গড়তে হলে চাই জীবন ঘনিষ্ঠ কর্মমুখী ও যুগোপযেগি শিক্ষাব্যবস্থা; যা সমাজ তথা দেশের জন্য কাক্ষিত জনশক্তি তৈরি করবে। আর কাঙ্খিত জনশক্তি তৈরি করতে হলে শিক্ষাকে হতে হবে কর্মমুখী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।

কিন্তু বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, শিক্ষাব্যবস্থাকে অক্ষম করে রাখা হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষার সবস্তরে শিক্ষার্থীদের টেকসই ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। জীবনঘনিষ্ঠ কর্মমুখী ও যোগাযোগ শিক্ষার শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য কমিয়ে আনা। এ দেশের শিক্ষায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি আর ৩
শতাংশ সরকারি। ৯৭ শতাংশ শিক্ষার কর্মকাণ্ড পরিচালনা, করছেন ৩ শতাংশ সরকারি চাকুরিজীবিরা।

প্রজ্ঞ-অভিজ্ঞ-দক্ষ একজন শিক্ষক নেতার মন্তব্য, ৯৭ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষাকে ৩ শতাংশ সরকারিরা গলা চিপে ধরছেন। বেসরকারি শিক্ষায় অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষকদের এমপিও নেই, পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস নেই, পূর্ণ চিকিৎসা ভাতা নেই, জীব কারো কারো একটিও-প্রমোশন নেই, বিনেদন ভাতা নেই, পূর্ণাঙ্গ পেনশন নেই, পূর্ণাঙ্গ ভবিষ্যৎ তহবিল নেই, শিক্ষা সহায়ক ভাতা নেই, পাহাড়ি ভাতা নেই। শুধু নেই আর নেই এর একমাত্র সমাধান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য কমিয়ে আনা। আবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহযোগি অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ নেই। যা আছে জীবনে একটি পদ সহকারী অধ্যাপক; তাও আবার অনুপাত প্রথা।

এ কারণে একজন কলেজ শিক্ষককে ৩০-৩৫ বছর চাকরি করেও প্রভাষক হিসেবেই অবসর গ্রহণ করতে হয়। দেখা যায়, তার ছাত্র অন্য প্রতিষ্ঠানে ৮-১০ বছর চাকরি করে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হয়ে যায়। বেসরকারি কলেজ ও মাদরাসায় সহযোগি অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃজন করা জরুরী। স্কেল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রয়েছে এক মহা হয়রানি। সব কাগজপত্র, যোগদান অথবা প্রথম এমপিওর সময় জমা দেয়া থাকলেও পুনরায়, বারবার সব কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আর তার জন্য গুনতে হয় পাপে ধাপে কাড়ি কাড়ি টাকা। শিক্ষা অধিদফতরে আগের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সময় হলে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগি অধ্যাপক পদে অটোপ্রমোশন দেয়া হলে এ মহা হয়রানিতে পড়তে হয় না। আর গুণতে হয় না কাড়ি কাড়ি টাকা! বছরে দু'টি ঈদে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ২৫শতাংশ ঈদ বোনাস- যা দিয়ে গরুর ভাগতো দূরের কথা, খাসির ভাগাও কেনা যায় না। বেসরকারি শিক্ষকদের ঈদ বোনাসের হার বা টাকার পরিমাণ কত, প্রধানমন্ত্রী জানেন কি? শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাভবন এবং ৩ শতাংশ সরকারি শিক্ষক ঠিকই শতভাগ বোনাস নিচ্ছেন আর বেসরকারিদের দিচ্ছেন এর ২৫ শতাংশ বোনাস। বিষয়টি বিবেচনা কা প্রয়োজন। বেসরকারি শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ব্যাংক নেই। অবিলম্বে এই স্বতন্ত্র ব্যাংক চালু করা প্রয়োজন। মাদরাসায় আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স নেই। অবিলম্বে সে কোর্স চালু করা জরুরি। জেলা সদরে কামিল মাদরাসাগুলোতে আরবি ভাষা কোর্স চালু করা যেতে পারে। প্রতিটি উপজেলা সদরে একটি স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। দুঃখের বিষয়, একটি মাদরাসাও জাতীয়করণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সুনজর কামনা করছি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া শিক্ষক পদ আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে না হলেও ৫-১০টি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে একজন স্বাস্থ্যসেবক বা ডাক্তার পদ সৃষ্টি করে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য কমিয়ে শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া হলে সেটি তাদের পাঠদানকে আরো বেগবান ও ফলপ্রসূ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement