২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওসি শিশিরের অপকর্ম তদন্তে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের টিম বরিশালে

ওসি শিশির কুমার পাল - ছবি : সংগৃহীত

বরিশাল জেলা পুলিশের সর্বাধিক বিতর্কিত বর্তমান বানারীপাড়া এবং সাবেক উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পালের অপকর্ম তদন্তে ঢাকা পুলিশ হেটকোয়াটার্সের একটি টিম গত দুই দিন ধরে বরিশালে অবস্থান করছে। এর আগেও এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকা হেডকোয়াটার্স থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেই তদন্তের একটিও এখনো আলোর মুখ দেখেনি। যা চলমান রয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ জুন উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামের ছয় বছরের এক শিশুকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালায় স্থানীয় মান্নান বেপারী। ওই ঘটনায় শিশুটির মা আইনের আশ্রয় নিতে গেলে উজিরপুর থানার তৎকালীন ওসি শিশির কুমার পাল তাদের অবহেলা করে সমঝোতার চাপ দেন। সে সময় ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ২৭ জুন ওসি শিশির একটি মারধরের মামলা নিয়ে বিষয়টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করে নিজেকে বিতর্ক থেকে দূরত্বে রাখেন।

গণমাধ্যমে থানা পুলিশের নাটকীয়তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ হেডকোয়াটার্স বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেনকে সরেজমিন পরিদর্শন করার নির্দেশ দেয়। তারই প্রেক্ষাপটে তিনি গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে পৌঁছে উজিরপুরে যান এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে গত বছরের ২৪ জুনের সেই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেন।

এ প্রসঙ্গে তদন্তে আসা ঢাকা পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেন তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত বছরের ২৯ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে উজিরপুরে শিশু ধর্ষণ চেষ্টায় পুলিশ নিলো মারধরের মামলা, শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ওই সংবাদটির ওপর ভিত্তি করে পুলিশ হেডকোয়াটার্স ওসি শিশিরের অসহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে তদন্ত গঠন করে এবং তাকে দায়িত্বভার দেন। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে তদন্তে সময়ক্ষেপন ঘটেছে।

সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পাশের বানারীপাড়া থানায় ওসি শিশির কুমার পালকে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত রয়েছেন। এর আগে আরো তিনটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে ওসি শিশিরের বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পাশাপাশি জেলা পুলিশ থেকেও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ সকল ঘটনায় সবকটিতেই এই পুলিশ কর্মকর্তার অসহযোগী ও পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ ছিল। কিন্তু অদ্যবধি কোনো তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট অজ্ঞাত কারণে জমা দিতে পারেনি। তবে অভিযোগ রয়েছে জেলা পুলিশের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা ওসি শিশির কুমারের পক্ষে থাকায় কোনো তদন্তই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখছে না। ফলে ওসি শিশির প্রকারান্তরে হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া।

মাঠ পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরির অভিযোগও রয়েছে। উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু আততায়ীর গুলিতে প্রকাশ্যে নিহত হন। তখন উত্তেজিত নান্টুর সমর্থকদের উস্কে দিয়ে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে বেশ কিছু মুসলিম পরিবারের বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করতে সহায়তা করেন ওসি শিশির। এছাড়া নান্টু চেয়ারম্যান হত্যার দায়ে এক যুবককে ঢাকা থেকে ধরে এনে ওই এলাকায় নিয়ে ক্রসফায়ার দেন ওসি শিশির। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ওই জনপদে। এরপর থেকে নান্টু হত্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ওই এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা ওসি শিশির হাতিয়ে নিয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে অভিযোগ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল