২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় মাদরাসা ছাত্র এখন ‘হোটেল বয়’

হোটেল বয়ের কাজ করছে মোঃ ইয়ামিন - ছবি : নয়া দিগন্ত

ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মোঃ ইয়ামিন (১৫)। করোনাভাইরাস হানা দেয়ার আগে এটাই ছিল তার পরিচয়। কিন্তু এখন সে হোটেল বয়। করোনার কারণে সংসারের অভাব কিছুটা দূর করা জন্য এবং পেটের তাগিদে পড়ালেখা ছেড়ে দুই মাস ধরে হোটেল বয়ের কাজ করছে এই শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ভায়লাবুনিয়া গ্রামের দিনমজুর মোঃ বেল্লাল খানের ছেলে ইয়ামিন। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। মা-বাবা, দুই বোন আর সে। ভাইবোনের মধ্যে বড় সে। দুই বোন সাথী ও আয়েশা। ভায়লাবুনিয়া সকরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাথী আর আয়েশার বয়স মাত্র দুই বছর।

ইয়ামিনের বাবা বেল্লাল খান দিনমজুরী কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাতেন। হঠাৎ করে দেশে চলে এলো মহামারি করোনাভাইরাস। এর প্রাদুর্ভাবে এক রকম আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনমজুর বেল্লাল খান সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সংসারে দেখা দেয় অভাব অনটন। বড় ছেলে মোঃ ইয়ামিন ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদরাসা লিল্লাহ্ বোর্ডিংয়ে থেকে মাদ্রাসার খরচে পড়ালেখা করে। করোনায় মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেও বাড়িতে চলে আসে। ফলে সংসারের খরচ আরো বেড়ে যায়। দিন যত সামনে যাচ্ছে তাতে বেল্লাল খানের পক্ষে দিন মজুরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিন বেলা আহার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে সংসারের অভাব দূর করতে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে ইয়ামিনকে হোটেল বয়ের কাজে লাগিয়ে দেন। বর্তমানে ইয়ামিন আমতলী পৌর শহরের চৌরাস্তা সংলগ্ন হোটেল সকাল সন্ধ্যায় বয়ের কাজ করছে। প্রতিদিন তিন বেলা খাওয়া শেষে মাসে তিন হাজার হাজার টাকা বেতনে কাজ করছে ইয়ামিন। সংসারের অভাব দূর করার জন্য মাস শেষে বেতনের সব টাকাই তুলে দিচ্ছেন দরিদ্র দিনমজুর বাবার হাতে।

যে বয়সে বই, খাতা নিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করার কথা। সেই বয়সে ইয়ামিন পেটের তাগিদে হোটেলে কঠোর পরিশ্রম করছে। পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের দৈন্যদশা, অভাব অনটন ও বাবার বৈরী মনোভাবে তার সে আশা-আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হওয়ার পথে। দারিদ্রতার কারণে তার আর লেখাপড়া হবে কিনা তাও বলতে পারছে না ইয়ামিন।

খোজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া বেশ কিছু অস্বচ্ছল পরিবার তাদের কিশোরদের একটু বাড়তি আয়ের আশায় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ঠেলে দিচ্ছে। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে এসব কিশোররা না বুঝেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন।

মাদ্রাসা ছাত্র ইয়ামিন বলেন, করোনা মহামারির আগে বাবা দিনমজুরী করে যা আয় করতো তা দিয়ে আমার মা-বাবা ও বোনসহ পরিবারের সদস্যরা তিন বেলা কোনো রকম খেয়ে পরে থাকতো পারতো। মহমারি করোনাভাইরাস আসার পর আমার মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। আমিও বাড়ি চলে আসি। বাবায় দিনমজুরী করে এখন যা উপার্জন করে তা দিয়ে আমরা তিন বেলা খেতে পারি না। তাই পেটের তাগিদে আমি এখন হেটেল বয়ের কাজ করি।


আরো সংবাদ



premium cement