১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব

বাঁধ ভেঙে দুই গ্রামের দেড়শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

উঁচু বাঁধের দাবি এলাকাবাসীর
-

“পানিতে মোগো সব শ্যাষ হইয়া গ্যাছে, মোগো জমির ফসল ব্যাবাক পানতে ডুইব্বা রইছে, ভাইস্যা গ্যাছে মোগো ঘের পুহিরের মাছ” আক্ষেপ করে এ কথাগুলো বলছিলেন সদর ইউনিয়নের উত্তর টিয়াখালী আদর্শ গ্রামের (গুচ্ছগ্রাম) সভাপতি আব্দুল খালেক প্যাদা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে ১৯ মে (মঙ্গলবার) রাতে বরগুনায় সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে আমতলী উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানের বাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে ফসলি জমিসহ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে এখনো পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর টিয়াখালী আদর্শ গ্রাম (গুচ্ছগ্রাম) ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের দেড়শতাধিক পরিবার। গত চারদিন ধরে তারা পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই দুই গ্রামের মাঝখান দিয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া নদী (হুমার খাল) বয়ে গেছে। নদীর দক্ষিণ পাশে তারিকাকাটা গ্রাম ও উত্তর পাশে টিয়াখালী আদর্শ গ্রাম (গুচ্ছগ্রাম)। এ গ্রাম দুটিতে দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় সাতশ’ লোকের বসবাস। নদীর দুই পাড়ে নেই কোন উঁচু বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানে বসবাসরতদের ফসলী জমি ও বাড়িঘরে জোয়ারের পানি ঢুকে নিমজ্জিত হয়। ১৯ বছর আগে এখানে বসবাসরতদের জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ ফুট প্রসস্থ ও ৪ ফুট উচ্চতার একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যা ২০১২ সালে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মোতাহার উদ্দিন মৃধা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একবার সংস্কার করেছিলেন। এরপর থেকে অদ্যবদি এ বাঁধটি সংস্কার না করায় বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান নড়বড়ে ও ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। ১৯ মে রাতে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফানের’ প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে এ বাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে গ্রাম দুটিতে পানি ঢুকে পড়ে। এতে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৫০টির অধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। প্রায় ২০০ একর জমির মুগ ডালসহ কাঁচা মরিচ, ভেনডি ও বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। গত চারদিন ধরে গ্রাম দুটির মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। স্থায়ীভাবে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে বসবাসরতরা দীর্ঘদিন ধরে একটি উচু বাঁধ নিমার্ণের দাবি জানিয়ে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর প্যাদা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে আমাদের দুটি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। আমার ২০ একর জমির মুগডাল বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। আজ আমরা চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি।

স্থানীয় জামাল মোল্লা জানান, উঁচু বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর ঝড় জলোচ্ছাসে আমাদের এ গ্রাম দুটিতে জোয়ারের পানি ঢুকে বসতবাড়ি জমিজমা, মাছের ঘের পুকুর প্লাবিত হয়। এখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করা ও জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষার জন্য এখানে একটি উচু বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।

আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, তারিকাটা গ্রামের ফসসি জমি ও বসতবাড়ি জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় জন্য এখানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।

আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো: হুমায়ূন কবির বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূযোর্গে গ্রাম দুটি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। গ্রাম দুটোতে বসবাসরতদের পানিবন্দির হাত থেকে রক্ষায় একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।

আমতলী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, এখানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভায় রেজিলেশন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। দুঃখের বিষয় অদ্যবদি এখানে কোন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, এ দুটি গ্রামের মানুষদের পানিবন্দির হাত থেকে রক্ষা করতে জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement