২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সিপিবি টীম লিডার নিখোঁজ

পটুয়াখালীতে বৃষ্টি-দমকা হাওয়া, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

পটুয়াখালীতে বৃষ্টি-দমকা হাওয়া, ৩০ গ্রাম প্লাবিত - সংগৃহীত

পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সাগর ও নদীর পানি ৩-৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার কলাপাড়ার এক ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম ও রাঙ্গাবালীর ৮টি গ্রাম এবং গলাচিপার ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে কলাপাড়ায় নৌকা ডুবে সিপিবি টীম লিডার শাহআলম নিখোঁজ রয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পটুয়াখালী জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। এ পর্যন্ত জেলার ৩ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাসফাকুর রহমান জানান, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চরলতা, গোলবুনিয়া, চর আন্ডা, খালগোড়া, গোঙ্গীপাড়া, চর কাশেম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭৪০টি বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন চরের মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের খাওয়ার জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া যারা রোজা আছেন তাদের ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. রবিউল ইসলাম জানান, কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের ১৭টি গ্রাম প্লাবিত। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক এর চেয়ে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তারা সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন।

গলাচিপা বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত, অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে গলাচিপার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গলাচিপা উপজেলার চর কারফারমা, চর বাংলা, বড় কাজল, ছোট কাজল, ছোট শিবা ও পৌরসভার বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গলাচিপা উপজেলার সর্বত্র বাতাস বইছে এবং বৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোলখালী গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকেটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এদিকে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের বদনাতলী ফেরিঘাটের উত্তর পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ী ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে ঐ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চরকাজল ইউনিয়নের দফাদার মাসুদ পারভেজ জানান, চরকাজল ইউনিয়নের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ অনেকাংশে না থাকায় এসব জায়গা থেকে পানি প্রবেশ করছে। ১নং থেকে ৫নং ওয়ার্ড তলিয়ে গেছে। ফলে বড় কাজল, ছোট কাজল ও ছোট শিবার প্রায় ২৫হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসার কাজ চলছে।

আমফান মোকাবেলা গলাচিপা উপজেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রানহানী রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১৩টি টিম মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই কিছু মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি(সিপিপি) পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করছে। ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাকি মানুষজন সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে।

গলাচিপা পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক তুহিন জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গলাচিপা পৌরসভার বেড়িবাঁধের বাইরে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে আনার কাজ চলছে। সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় উপজেলায় এখনো কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

ঘূর্ণিঝড় আমফান বর্তমানে পায়রা সমূদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৩শ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। তবে ক্রমশই এটি উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ। এদিকে উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। সকালেই পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় দেখানো হয়েছে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।


আরো সংবাদ



premium cement