২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দিনাজপুরে লোকসানের মুখে সবজি চাষিরা

দিনাজপুরে লোকসানের মুখে সবজি চাষিরা - নয়া দিগন্ত

করোনাভাইরাস অস্থিরতার কারণে দিনাজপুরের শাক-সবজির বাজারে বিরাজ করছে চরম মন্দাবস্থা। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে সীমান্তবর্তী এ জেলার লাখো প্রান্তিক চাষি।

চাষিরা জানায়, শীত মৌসুমে সবজি বিক্রি করে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও এখন উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। বর্তমানে সদর উপজেলাসহ বীরগঞ্জ, বিরল, কাহারোল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর ও খানসামার পাইকারি বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিম, টমেটো, শশা, গাজরসহ অধিকাংশ সবজিই নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

ক্ষতি পুষাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল। অন্যদিকে শাকসবজির যখন এমন মন্দাবস্থা তখন চাল, ডাল, গোস্ত, মাছসহ মসলা জাতীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। এসব পণ্য ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরউপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষমাত্রার বিপরীতে ১৪ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা দিনাজপুরে এসে উৎপাদিত সবজির অধিকাংশই ক্ষেত বা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে কিনে নিয়ে যায়। এ জন্য উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে কৃষকেরা সবজির ন্যায্যমূল্যও পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কে টানা ৯দিন ধরে ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে সবজি কিনতে ঢাকা থেকে পাইকারেরাও আসতে পারছে না। এতে দিনাজপুরের বাজারগুলোয় সবজির দামে ধ্বস নেমেছে। পচে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকেরা এখন অধিকাংশ সবজিই বেশ কম দামে বিক্রি করছেন।

শহরের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারী ও খুচরা বাজার বাহাদুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ সবজি বাজারে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু পাইকারের অভাবে সেগুলো বিক্রি করতে পারছেন না। স্বল্প সংখ্যক স্থানীয় পাইকার বাজারে আনা সবজির দাম বলছেন খুবই কম।

স্থানীয় কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, বেগুনের কেজি ৩ টাকা থেকে ৪ টাকায় নেমেছে। শশার কেজি ৫ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ২৫ টাকা, বেগুন কেজি ৩-৪ টাকা, এক বোঝা ডাটা ১৫ টাকা, গাজরের কেজি ৫ টাকা এবং টমেটো ৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। নতুন সবজি সজনার কেজি ৬০ টাকা। করলার পাল্লা (পাঁচ কেজি) ১০০ টাকা। পাশাপাশি আলু ও পেঁয়াজের দামও হঠাৎ করেই কমে গেছে।

বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকায়, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অবশ্য বাজার এক রকমভাবেই চলমান নয়, কখনো কখনো কোন কোন সবজির টান পড়ায় দাম ওঠানামা করছে।

চিরিরবন্দর উপজেলার ফুলপুর গ্রামের কৃষক ফয়জুর রহমান জানান, এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছিলেন। এ জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন ভালো হয়েছে। আগে ঢাকা থেকে পাইকারেরা ক্ষেতে গিয়ে প্রতি মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হিসেবে কিনেছেন। কিন্তু এখন পাইকার না আসায় ক্ষেত থেকে বেগুন বাজারে নিয়ে এসেছেন। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতি মণ ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে তার উৎপাদন খরচ তো উঠবেই না বরং অনেক টাকার লোকসান হবে বলে তিনি জানান।

বিরল উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, মোর ২৫ শতাংশ জমিত বাঁধাকপি চাষ করিছিনু। আগে পাইকাররা ক্ষেত থাকি ১০০ বাঁধাকপি ৮০০ টাকায় কিনেছল। কিন্তু এখন পাইকাররা ১০০ বাঁধাকপির দাম ১০০ টাকাও কহেনা। এই দামে বেচিলে হামার অনেক লোকসান হবি। কিন্তু না বেচি ফের কী করিম? বাড়িত ঘুরাই নিগেইলে ভ্যান ভাড়াটা সুদ্যায় লোস। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাহাদুর বাজারের পাইকারী বাজারে আগতকৃষক সাদ্দাম, মজিবর, করিমুল্লা বলেন, লোকসানে সবজি বিক্রি করে দুনিয়া অন্ধকার দেখতে পাচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে সবজির দাম আরও কমে যেতে পারে বলে তাদের ধারনা। আর তখন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

শহরের রামনগর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আপেল বলেন, করোনা আতঙ্কে দিনাজপুরের সবজির বাজারে ধস নেমেছেকিছুদিন ধরে। বাজারে মানুষ নাই, সবজি ঢাকায় যাচ্ছে না। একদিকে নির্দিষ্ট সময় পরে সবজি ক্ষেতে রাখা যায় না, অপরদিকে পচনশীল পণ্য বলে কৃষক কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে লোকসানের মুখে হতাশগ্রস্থ সীমান্তবর্তী এ জেলার লাখো প্রান্তিক চাষি।

সবজির দাম অনেকটা কমে গেছে বিষয়টি স্বীকার করে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের এই ক্ষতির বিষয়টি সাময়িক। আশা করছি অচিরেই এগুলো স্বাভাবিক হবে। আলুর ক্ষতি কাটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর অন্যান্য শাকসবজি বাজার খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কিভাবে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সবজির দাম যখন নিন্ম পর্যায়ে তখন চালের জেলা দিনাজপুরে চালের বাজার হয়ে উঠেছে অস্থির। কয়েকদিনে কয়েকদফা দাম বেড়েছে। দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় চালের আড়ৎ বাহাদুর বাজারে মিনিকেট প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চাল বিক্রি হচ্ছে ২৮০০-৩০০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও চালের এ দাম ছিল সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকা। একইভাবে মোটা চাল সুমন স্বর্ণ, আঠাস চালের বস্তা প্রতি বর্তমান দাম ২১০০-২৩০০ টাকা। কদিন আগেও এর দাম ছিল ১৬৫০-১৮০০ টাকা। খ্যাতিমান গরুর গোশ্তর বাজার রামনগরে দেখা যায়- প্রতি কেজি গরুর গোস্ত বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৫৭০ টাকা দরে। একই দাম বাহাদুর বাজারেও। সেখানে খাসির গোস্ত ৭০০-৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বড় মাছ উভয় বাজারে একই ধরণের দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। বড় রুই, কাতল মাছ ৬৫০-৭০০ টাকা।

বাজারের উর্দ্ধগতি কিংবা অস্বাভাবিক নিম্নগতি কোনটাই কাম্য নয়। এতে একটা মুনাফাখোর শ্রেণি লাভবান হয় আবার সাধারণ জনগণসহ প্রান্তিক চাষিরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বাজার স্থিতিশীল রেখে জনজীবন স্বাভাবিক রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শাহ্ আলম শাহী। তিনি বলেন, বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্টদের জোর তৎপরতা একান্ত প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement
ময়মনসিংহে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত রমজানের প্রথমার্ধে ওমরাহ পালন করলেন ৮০ লাখ মুসল্লি পোরশায় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী যুবক লাশ ফেরত গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, এতে আমরা বিজয়ী হবো : মির্জা ফখরুল নিঝুমদ্বীপে পুকুরে পাওয়া গেল ১০ কেজি ইলিশ ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় চলবে ১৫ ফেরি ও ২০ লঞ্চ দি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের রক্তদাতাদের সংবর্ধনা প্রদান কক্সবাজারে ওরিয়ন হোম অ্যাপ্লায়েন্সেসের ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত সৈয়দপুরে ফেসবুক লাইভে থেকে যুবকের আত্মহত্যা! মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫ ১৫ বছর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

সকল