২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফরিদপুরে করোনার আতঙ্কে চিকিৎসাবঞ্চিত সাধারণ রোগী

ফরিদপুরে করোনার আতঙ্কে চিকিৎসাবঞ্চিত সাধারণ রোগী - সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। সাধারণ রোগীদের দেখতেও তারা অনেকটা বিব্রত। সরকারী হাসপাতালেও রোগীদের সেই ভিড় নেই। অসুস্থ্য রোগীদের কাছে যেয়ে চিকিৎসা দিতেও ইতস্তত বোধ করছেন তারা। অনেক চিকিৎসক নোটিশ টানিয়ে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন এরমধ। এতে ভোগান্তিতে পরেছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। সরকারী-বেসরকারী প্রায় সব হাসপতালেই একই দশা।

ফরিদপুরের ৫শ’ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে এই সংখ্যা ৮শ’ ছাড়িয়ে যেতো। ভর্তি রোগীরা বেড না পেয়ে করিডোর ও সিড়ি বারান্দাতেও অবস্থান করতো। শনিবার এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো মাত্র ২৬৬ জন। আর ১শ’ শয্যার ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে শনিবার পর্যন্ত ভর্তি ছিলো মাত্র ৩০ জন। উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও একই পরিস্থিতি বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অন্য রোগে আক্রান্তরাও এখন চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন।

অপরদিকে, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ হতে করোনা ভাইরাসের মোকাবেলায় কার্যত এখনও পর্যন্ত তেমন সুব্যবস্থা এখানে গড়ে ওঠেনি। এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও নেই করোনা রোগ সনাক্তের ব্যবস্থা। ফমেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত তিনজন রোগীকে করোনা রোগে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করার পর তাদের দু’জনই নিজেদের উদ্যোগে ঢাকায় চলে যান। এখন মাত্র একজন সন্দেহভাজন রোগীকে ফমেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। গত ফেব্রæয়ারী মাসের ২৪ তারিখে এই আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত তিনজন রোগী সেখানে ভর্তি করা হয়। তবে তারা আসলেই করোনা রোগাক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত নই। এখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা এখনো করোনা পরীক্ষার কিট পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র কিট এলেই করোনা সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হবে না। এজন্য পৃথক ল্যাবরেটরী ও আইসিআর মেশিন দরকার। কিন্তু সেই মেশিনই নেই এখানে। আর এই মেশিন চালাতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান। সেই টেকনিশিয়ানও নেই। তবে মেশিন পেলে নিাপহ ভাইরাস টেষ্টের পরীক্ষায় যে টিম প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো তাদের থেকে একজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যাবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে যারা গুরুতর অবস্থায় আসছেন তাদেরই আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। এসব রোগের সাধারণ রোগীদের ভর্তি না করে দুর হতেই দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রাইভেট চেম্বারেও রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন এসব চিকিৎসক। অনেকে তাদের চেম্বারের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য রোগী দেখা বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন। সরকারের নির্দেূশণা তারা মানছেন না।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীরা চরম বিপাকে পরেছেন। সদর উপজেলার গোলডাঙ্গির চরের কাশেম মোল্যা নামে একজন রোগী পায়ে পুরনো ক্ষতের চিকিৎসা নিতে শনিবার সকালে জেনারেল হাসপাতালে যেয়েও কোন চিকিৎসক পাননি। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তবে দুর হতে দেখেই চিকিৎসক তাকে ব্যাথা নাশকের ওষুধ দিয়েছেন। ওই রোগীর স্বজনেরা জানান, তার পায়ে গ্যাংরিনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিন্তু অপারেশনের কথা বলছেন না চিকিৎসক। কাছে এসেও দেখছেন না।

এছাড়া হাতের দুই হাত ভেঙে ঘরে পড়ে থাকা সাংবাদিক নুরুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তার অপারেশন করানোর কথা ছিলো। কিন্ত চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, ওটি বন্ধ থাকায় অপারেশন এখন আর হচ্ছে না।

ফরিদপুরের চিকিৎসক নেতা ও ডায়বেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আসম জাহাঙ্গির হোসেন টিটো চৌধুরী ডাক্তারদের অবহেলার তথ্য সঠিক নয় দাবি করে বলেন, চিকিৎসকেরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইতিমধ্যে তাদের পিপিই (পারসোনাপল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) দিয়েছেন। পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। তিনি বলেন, যানবাহন চলাচল খুবই সীমিত হওয়ায় দুরদুরান্ত হতে রোগীরা আগের মতো আসতে পারছেন না বলে রোগীদের সংখ্যা কমে গেছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারী হাসপাতালগুলোকে আমরা করোনা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা গুরুত্বের সাথে করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছি। কেউ যাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত না থাকেন সেবিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত ১৬শ’ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩৩ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। আর ছাড়পত্র দেয়া হয় ২৪ জনকে। জেলার দু’টি সরকারী হাসপাতালে ৮৫টি বেড প্রস্তুত রয়েছে করোনা রোগীদের জন্য। একই সাথে ২টি এ্যাম্বুলেন্স ও ৩৫টি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement