২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রকাশ্যে ঘুরছেন প্রবাসীরা, জনমনে আতঙ্ক

বরিশালে প্রকাশ্যে ঘুরছেন প্রবাসীরা জমনে আতঙ্ক - সংগৃহীত

বরিশাল বিভাগে পর্যটন, পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে কাজ করতে আসা বিদেশী নাগরিক, প্রবাসীসহ নানা কারণে করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ল্যাবের দাবি করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হাসপাতাল হচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে যেন করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ ল্যাব স্থাপন করা হয় সেজন্য আমি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলে আবেদন করেছি। দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক জনসংখ্যা, বিদেশ ফেরত এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার চিত্র তুলে ধরে এই আবেদন করা হয়েছে।

সূত্রমতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বরিশালে সার্বিক সতর্কতা ও ব্যবস্থাপনার অংশহিসেবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করার কাজটি স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে স্থানীয় প্রশাসন একযোগে করে যাচ্ছে। তবে সরকারি হিসেবে যে পরিমাণ প্রবাসী বরিশাল বিভাগে এসেছেন তার থেকে অনেক কম প্রবাসীকে এখন হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া সম্ভব হয়েছে। যে কারণে বিভাগের ছয় জেলার মানুষের মাঝে এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রকট হওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা শুরু হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেলক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আলাদাভাবে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।

বরিশাল বিভাগে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৭৬৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়া বরগুনা, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলায় তিনজন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোন রোগীকে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত করা যায়নি। তবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রকট হলে এই বিভাগেও আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কারও শরীরে করোনা ভাইরাস রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই বরিশালে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ভাইরাস প্রাদুর্ভাব প্রকট হওয়ার ক্ষেত্রে এর সনাক্তকরণের জন্য দেশের সাতটি বিভাগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনে বরিশাল বিভাগ বাদ পড়ার একটি শঙ্কাও করেছেন অনেকে। এতে করে উদ্বেগের মধ্যে পরেছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। কারণ বরিশাল বিভাগে বর্তমানে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন বিনোদন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের ক্ষেত্র হওয়ায় বিমান, লঞ্চ ও সড়কপথে রাজধানীসহ দেশ-বিদেশের লোকজন যাতায়াত করছেন।

সূত্রমতে, বরিশাল জেলা সদর সবচেয়ে বেশি জনবহুল ও লোকসমাগম সম্পন্ন এলাকা। বিভাগের বাকী পাঁচ জেলা ও মাদারীপুর, শরিয়তপুর, ফরিদপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার লোকজনও বিভিন্ন কাজে বিভাগীয় শহর বরিশালে আসেন। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতেই আসেন বেশি মানুষ। সেক্ষেত্রে এ হাসপাতালকে ঘিরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের দাবি গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর।
প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাসীরা।

খোঁজনিয়ে জানা গেছে, জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার অসংখ্য প্রবাসী দেশে ফিরে হোম কোয়ারেন্টিনে না এসে প্রকাশ্যে হাট ও বাজারে ঘোরাফেরা করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে করোনা প্রতিরোধে সচেতনামূলক পোস্ট করলেও মাঠপর্যায়ে তারা কোন খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সূত্রমতে, গৌরনদীর বার্থী এলাকায় অতিসম্প্রতি ইতালি থেকে ফিরেছেন মামুন সরদার ও দুলাল সরদার। একই উপজেলার কটস্থল গ্রামে ফিরেছেন ইতালি প্রবাসী মাসুদ মাঝি ও জিয়া মাঝি। বড় দুলালি গ্রামের নিজাম মুন্সি ও জলিল সরদার ইতালি, বাউরগাতি গ্রামের আবুল মোল্লা এবং টরকী বন্দর মসজিদ মার্কেটের নিউ খান গার্মেন্টসের মালিকের ভাই মতিউর রহমান মতি কানাডা থেকে, কসবা গ্রামের আয়াতুল্লাহ খমেনি নামের এক প্রবাসী ফ্রান্স থেকে বাড়িতে ফিরে হোম কোয়ারেন্টিনে না এসে তারা প্রকাশ্যে হাট ও বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইভাবে আগৈলঝাড়া উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামে ইতালি থেকে একই পরিবারের তিনজনসহ মালেশিয়া ও ফ্রান্স থেকে অতিসম্প্রতি বাড়িতে ফিরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন অসংখ্য প্রবাসীরা।

কয়েকজন প্রবাসীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সাংবাদিকদের বলেন, তাদের এয়ারপোর্টে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয়েছে। তাদের শরীরে করোনার কোন সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তারপরেও হোম কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে ওইসব প্রবাসীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement