১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কাশিয়ানীতে অবৈধ বেকারিতে সয়লাব

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিষাক্তদ্রব্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী
-

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে যত্রতত্রভাবে গজিয়ে ওঠেছে অবৈধ বেকারি। এসব বেকারিতে অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিষাক্ত দ্রব্য দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। আর এসব খাদ্যসামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে উপজেলার কনফেকশনারি দোকানগুলোতে এবং উপজেলার আশপাশের লোহাগড়া, আলফাডাঙ্গা, মুকসুদপুর ও বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে।
জানা গেছে, নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই কাশিয়ানী উপজেলা রামদিয়া বাজারের গোডাউনের পাশে, রামদিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাশে, ভাটিয়াপাড়া বাজারে, জয়নগর বাজার ও জঙ্গল বাগিয়ায় গড়ে ওঠা এসব বেকারি যুগ যুগ ধরে কোনোপ্রকার কাগজপত্র ছাড়াই তৈরি করে যাচ্ছে বিস্কুট, পাউরুটিসহ অন্যান্য বেকারি খাদ্যদ্রব্য।
বিএসটিআইর অনুমোদন না নিয়ে এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিষিদ্ধ মেডিসিন সালটু ও ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে খাদ্যসামগ্রী তৈরি এবং সেগুলো বিভিন্ন নামকরা কোম্পানির মোড়কে ঢেকে বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব নকল খাদ্যসামগ্রী খেয়ে সাধারণ জনগণ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বেকারিগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মিষ্টিসহ নানাধরনের মুখরোচক খাদ্যপণ্য। অতি নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি হচ্ছে এসব বেকারি পণ্য। শ্রমিকরা খালি গায়ে ও খালি পায়ে অত্যন্ত নোংরা অবস্থায় খাদ্যসামগ্রী তৈরি করছে এবং মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা খাদ্যপণ্যের পাশ দিয়ে খালি পায়ে ও উদোম গায়ে হাঁটাহাঁটি করছে। গায়ে লেগে থাকা ঘাম ও নোংরা হাত পরিষ্কার না করেই বেকারির কাঁচামাল নাড়াচাড়া করছে। তাদের আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও অপরিষ্কার ও অত্যন্ত নোংরা।
পাত্রগুলোতে বড় বড় মাছি ভনভন করছে। পুরোনো ও অপরিষ্কার ময়দা, ডালডা কিংবা তেলে ভাজা হচ্ছে বেকারিপণ্য। ময়লা হাতেই প্যাকেটজাত করা হচ্ছে সেগুলো। প্রস্তুতকরণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন বেকারিসামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে।
কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের জাংগাল বাঘিয়া এলাকার তিন্নি বেকারি মালিক লেলিন মোল্যা এ প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, কাগজপত্র লাগবে কেন? ওগুলো ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক এসব জানেন।
বেকারি মালিকদের অনিয়ম ও নোংরা পরিবেশের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক বুলবুল হোসেন বলেন, জনবল স্বল্পতা, বরাদ্ধ কম থাকায় আমার একার পক্ষে ওসব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা সম্ভব না।
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা: আমিনুল ইসলাম বলেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি বেকারিসামগ্রী জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। এসব খেলে পেট ব্যথা, চর্মরোগ, কিডনি সমস্যা, খাদ্যনালিতে সমস্যাসহ আরো জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাশেদুজ্জামান জানান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য উৎপাদনের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement