১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পদ্মা-মেঘনায় নৌ-ডাকাত গ্রুপ আবার সক্রিয়

-

মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনায় নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপ আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। সম্প্রতি তারা বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছে। ফলে পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনার বিস্তৃত অঞ্চল এখন নৌযান চালক-শ্রমিকদের জন্য আতঙ্কে রূপ নিয়েছে।
জানা যায়, নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপের আক্রমণে সর্বস্ব হারিয়ে ভুক্তভোগীরা নিজ গন্তব্যে চলে যায়। তারা সংশ্লিষ্ট থানায় ঘটনাগুলো এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করে না। এই সুযোগে বাবলা গ্রুপের ডাকাতদল আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের কারণে চাঁদপুরের মতলবের কাঁচিকাটা ইউনিয়ন ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ও আধারা ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়নের আশুলিরচর ও পশ্চিমকান্দি গ্রামে স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে বাবলা ও তার সহযোগীরা মেঘনা ও পদ্মা নদীতে ডাকাতি করে। নৌপথে সংঘটিত অপরাধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও নৌ-ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা দ্রুতগামী ট্রলার বা স্পিডবোটে পালিয়ে যায়।
পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনার এক পাশে মতলব, মহনপুর ও চাঁদপুর এলাকা এবং অপর পাশে মুন্সীগঞ্জের বাংলাবাজার, বকচর, কালিরচর ও চর আব্দুল্লাহ গ্রাম। এলাকাজুড়ে বাবলা বাহিনী নদীতে চলাচলরত বালুবাহী বাল্কহেড, তেলবাহী জাহাজ, যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্টিমার ও নদীতে মাছ ধরার জেলেদের ট্রলারে হামলা চালায়।
জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ বিকেলে মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বাংলাবাজার কাজিয়ার চরে পদ্মার শাখা নদীতে বাবলার নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতদল টাকা না পেয়ে ড্রেজার, ভেকু, ট্রলারসহ শ্রমিকদের বসতঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তাদের হামলায় ড্রেজারে থাকা দুই শ্রমিক আহত হন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ২২ ডাকাতের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ২৮ মার্চ সকালে চাঁদপুর এলাকা থেকে এজাহারভুক্ত তিন ডাকাত শিপন খালাসি, জামান খালাসি ও মামুন খলাসিকে গ্রেফতার করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। কিন্তু দলনেতা বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসিসহ অপর আসামিরা এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নৌ-ডাকাত বাবলার নামে চাঁদপুর থানায় আটটি, মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ২২টি, নারায়ণগঞ্জ জেলায় চারটি ও শরীয়তপুর জেলায় তিনটি মামলা রয়েছে। নৌপথে সংঘটিত অপরাধের খবর পেয়ে ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান চালালেও জেলার সীমানা জটিলতার কারণে মাঝপথেই থেমে যায় গ্রেফতার অভিযান। গজারিয়া ও মুন্সীগঞ্জ থানার নৌ-পুলিশ চাঁদপুর জেলার মতলব থানার মহনপুর সীমানায় প্রবেশ করে না। অন্য দিকে মতলব থানার মহনপুর নৌ-পুলিশ মুন্সীগঞ্জ জেলার সীমানা অতিক্রম করে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপ পদ্মা ও মেঘনা নদীতে বেপোরোয়া হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে নদীর তীরসংলগ্ন কালিরচর, চর আব্দুল্লাহ, বকচর, নাসিরাচরসহ আশপাশ গ্রামের অধিবাসীরা এই নৌ-ডাকাতদের প্রতিরোধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান পিপিএম জানান, দুই জেলার নৌ-সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল অপরাধ ঘটিয়ে খুব সহজেই আত্মগোপনে চলে যেতে পারে। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ নৌ-ডাকাত বাবলাসহ সঙ্গীয় ডাকাতদের গ্রেফতারে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement