১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কুষ্টিয়ায় যত্রতত্র বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়াম

মানুষ ও পশুপাখির স্বাস্থ্যঝুঁকি, ফসল উৎপাদন ব্যাহত
সড়কের পাশে পার্থেনিয়াম গাছ। ছবিটি গড়াই নদীর তীরবর্তী কেশবপুর গ্রাম থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -

কুষ্টিয়ায় যত্রতত্র ব্যাপক হারে জন্মাচ্ছে পার্থেনিয়াম নামক এক বিষাক্ত আগাছা। মানবদেহসহ পশুপাখির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক আগাছাটি। বিভিন্ন সড়কের পাশে, ফসলের মাঠ, পতিত জমি কিংবা বাড়ির আনাচে-কানাচে দেখা মিলছে এই আগাছার। কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিকারক এই উদ্ভিদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও নিধনে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
গুল্ম প্রজাতির এ গাছটির ইংরেজি নামই পার্থেনিয়াম। এটি অঞ্চলভেদে কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী, হোয়াইট টপ ও স্টার উড প্রভৃতি নামেও পরিচিত। পুরো আগাছাটিই ক্ষতিকর। বিশেষ করে এর ফুলের রেণুতে থাকা সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ পার্থেনিন মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড প্রভৃতি, ক্ষতস্থানে রক্তের সাথে মিশে চর্মরোগ হতে পারে। ফুলের রেণু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়। গবাদিপশু এ আগাছা খেলে অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়। এর পুষ্পরেণু বেগুন, টমেটো, মরিচের মতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত করে। মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণের প্রক্রিয়াও ব্যাহত করে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়ক ও বিভিন্ন ছোট ছোট রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায় কিংবা ফসলের মাঠেও ব্যাপক হারে জন্মাচ্ছে ক্ষতিকারক এ আগাছা। পার্থেনিয়াম গাছটি দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। যার উচ্চতা এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত। এক একটি গাছ ২০ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দেয়। ফলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলা জুড়ে। ঝাঁকড়া গাছগুলোর ছোট ছোট সাদা ফুল খুবই বিষাক্ত। গাছের আয়ুকাল তিন থেকে চার মাস। এর ফুল গোলাকার ও আঠালো হয়ে থাকে। ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় ২২ লাখ মানুষ ও গবাদিপশু।
পরিবেশ বিজ্ঞানী গৌতম কুমার রায় জানান, পার্থেনিয়াম ফুলের রেণু বাতাসে ছড়ালে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছতে পারে, যা থেকে জন্ম নিতে পারে শ্বাসকষ্ট, চর্ম, এলার্জি এমনকি মরণ ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারের মতো রোগ।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, পার্থেনিয়াম গাছের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা করতে পারলেই বিষাক্ত আগাছা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তিনি বলেন, আগাছাটি দমন করার সময়ও সতর্কতা অবলম্বন করা একান্তই জরুরি। হাতে রাবারের গ্লাাভস বা পলিথিন প্যাকেট জড়িয়ে ও মুখে পাতলা মাস্ক পরে নিতে হবে। ক্ষতিকারক এই উদ্ভিদ নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
খোকসা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোকন হোসেন বলেন, পার্থেনিয়ামের ফুল মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ গাছ নষ্ট করে ফসলের গুণগতমান ও উৎপাদন বাড়াতে হবে।
বন ও পরিবেশ, কৃষি এবং সড়ক বিভাগ যৌথভাবে এই ক্ষতিকারক উদ্ভিদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও নিধনে জরুরি ব্যবস্থা নেবে এমনটিই প্রত্যাশা সবার।


আরো সংবাদ



premium cement