মানব পাচার চক্রের কবলে পড়া শিবগঞ্জের যুবকের লোমহর্ষক ঘটনা
মালেশিয়ায় পৌঁছলেও ভাগ্যের চাকা ঘুচেনি নুরুল ইসলামের। উল্টো নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়- বগুড়া অফিস ও শিবগঞ্জ সংবাদদাতা
- ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ার শিবগঞ্জের ধাওয়াগীর মিল্কিপুর গ্রামের দিনমজুর নুরুল ইসলাম (২৭)। ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাব অনটনে চলছিল তার সংসার। এরই মধ্যে পরিচয় হয় মানবপাচার সিন্ডিকেটের এক সদস্যের সাথে। চক্রের সদস্যরা বৈধ উপায়ে এবং ভালো বেতনে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভন দেখায় তাকে। তাই তিনি সুদে টাকা ধার নিয়ে সেই টাকা তুলে দেন ওই চক্রের সদস্যের হাতে। এরপর ভাগ্যে তার নেমে আসে অন্ধকার।
পথে পথে নির্যাতন আর অত্যাচার সহ্য করে নুরুল ইসলাম মালেশিয়ায় পৌঁছলেও ভাগ্যের চাকা তার ঘুচেনি। উল্টো নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সেখানে তাকে বেঁধে রেখে করা হয় শারীরিক নির্যাতন। ভিডিও কলে পরিবারকে নির্যাতনের এসব দৃশ্য দেখিয়ে টাকা দাবি করে তারা। অবশেষে তিনমাস জেল খেটে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে গত ১৩ জুন দেশে ফেরেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার মিল্কিপুর গ্রামে গেলে নুরুল ইসলাম এভাবেই তার ওপর চলা নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী বলেন।
তিনি বলেন, আমার প্রতিবেশী ফারুক হোসেন তার বিহান (ছেলের শ্বাশুড়ি) তানজিলা বেগমের মাধ্যমে আমাকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন। এরপর আমি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এবং এনজিও থেকে সুদে টাকা ধার নিয়ে গত ১ জানুয়ারি ফারুকের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিই। তারা আমাকে প্রথমে ভারতে ও পরে ভিয়েতনামে পাঠায়। ভিয়েতনামে গিয়ে দেখি আরো অনেককে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে ১৪ দিন একটি ঘরে আটকে রেখে আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়। আমাদের কাছ থেকে অনেক আগেই সব টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর ভিয়েতনাম থেকে চোরাই পথে থাইল্যান্ডে এবং নৌকাযোগে মালেশিয়া পাঠায়। মালয়েশিয়ায় আমাদেরকে আরেকটি ঘরে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সময় তারা বাড়ি থেকে আরো টাকা আনতে বলে। পরে আমার বাবা সুদে আরো একলাখ টাকা এনে তাদের এক চক্রের হাতে দেয়।
নুরুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক ওই ঘরে আটক থাকার পর মালেশিয়া পুলিশ আমাদেরকে উদ্ধার করে এবং জেল হাজতে পাঠায়। তিন মাস জেল খেটে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে গত ১৩ জুন দেশে ফিরি। দেশে ফেরার পর আমার বাবা গত ২১ এপ্রিল বগুড়া আদালতে মানবপাচার আইনে ফারুক ও তানজিলাসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে ঋণে জর্জরিত নুরুল ইসলামের পরিবার। এনজিওর কিস্তি ও সুদের টাকা পরিশোধের চাপ, অপর দিকে বেঁচে থাকার লড়াই।
অভিযুক্ত ফারুক মিয়া জানান, নুরুল ইসলাম বিদেশ যেতে চাইলে আমি শুধু লাইন দেখিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া আর কিছু না।
অভিযুক্ত তানজিলা বেগম বলেন, নুরুল ইসলামের ভাত খাওয়ার থালা পর্যন্ত নেই। সে কীভাবে আমাকে ছয় লাখ টাকা দিবে? তার সাথে সাড়ে তিন লাখ টাকার কন্টাক্ট হয়েছিল। টাকা দিতে পারেনি বলে তাকে এজেন্টের লোকজন নির্যাতন করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই বগুড়ার সাব ইন্সপেক্টর সবুজ মোহাম্মদ জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে বাদির অভিযোগ সত্য বলে মনে হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা