১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যশোরের রাজারহাটে চামড়ার দরপতন

পুঁজি বাঁচেনি অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর
-


দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট থেকে লোকসান নিয়ে ফিরেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এমন কোনো ব্যবসায়ী পাওয়া যায়নি যার লোকসান হয়নি। গতকাল শনিবার ছিল ঈদ-পরবর্তী রাজারহাটের প্রথম বাজার। এদিনই লোকসানের কথা জানান তারা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগের রাতেই চামড়া নিয়ে হাজির হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে, এ বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে কোনো চামড়া কেনাবেচা হয়নি। অধিকাংশ ব্যবসায়ী লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। গরুর চামড়া মোটামুটি বিক্রি হলেও বিপাকে পড়েন ছাগলের চামড়া বিক্রেতারা। প্রতি পিস ছাগলের চামড়া তিন টাকা ৮৫ পয়সায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে এমন কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পাওয়া যায়নি যে, তার গরুর চামড়ায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লোকসান দেননি। সবমিলিয়ে বড় বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।
গত ৩ জুন চামড়া খাতের একাধিক সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী, ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

রাজারহাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ব্যাপারীরা জানান, সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১ থেকে ৪০, মাঝারি আকারের ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, বড় আকারের লবণযুক্ত একটি গরুর চামড়া বিক্রি হওয়ার কথা কমপক্ষে এক হাজার ৭০৫ টাকা, মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের এক হাজার ৩৭৫ টাকা এবং ছোট আকারের একটি চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছিল ৮৮০ টাকা। অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার বেশি গরুর চামড়া বিক্রি হয়নি এবার। সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫০ টাকা।
কেশবপুর থেকে আসা কালীদাস নামে এক বিক্রেতা ইমরান হোসেন পাপ্পু নামে এক আড়তদারকে তার ৫২ পিস ছাগলের চামড়া পাঁচ টাকা করে কেনার জন্য তোষামোদ করতে থাকেন। কালীদাস উপায় না পেয়ে এক এক পিস ছাগলের চামড়া বিক্রি করেন ৩ টাকা ৮৫ পয়সায়। এখানেই শেষ না, ব্যাপারীরা দাম না বলায় বিক্রেতারা বাজারে দুই স্তূপ ছাগলের চামড়া ফেলে রেখে চলে গেছেন।
খুলনার কয়রা উপজেলার ঘুগরাকাটি থেকে গরুর ১১৭ পিস চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন ফটিক মণ্ডল। তিনি জানান, তার প্রতি পিস চামড়ায় গড়ে ২০০ টাকা করে লোকসান হয়েছে। অথচ একটি চামড়ায় লবণ গেছে ৩০ টাকার।

ডুমুরিয়া থেকে গরুর ২৫০ পিস চামড়া নিয়ে আসেন মনিরুল ইসলাম। তিনি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেন। তার বড় ধরনের লোকসান হচ্ছে বলে তিনি জানান। ৫০ বছর ধরে চামড়া ব্যবসা করছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার রাশেদ ব্যাপারী। তিনি জানান, এক হাজার ২০০ টাকায় কেনা চামড়া তাকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
রাজারহাটের আড়তদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, ভালো চামড়ার ভালো দাম। এবার আবহাওয়ার কারণে চামড়ার মান খারাপ। তা ছাড়া, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় চামড়া বেশি দামে কিনে ফেলেন।
রফতানিকারক কাজী আনিছুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আজীবন বলবে লোকসান হয়েছে।
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর বলে লোকসান হচ্ছে। এবার দাম ভালো। বাজারে ৩৫ হাজারের মতো চামড়া এসেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement