আমতলীতে সাপের ছোবলে নারীর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

বরগুনার আমতলী উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের আর্শ্বেদ গাজীর স্ত্রী রাজিয়া বেগমের সাপের ছোবলে মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ- একটি মহল রাসেল ভাইপার সাপের ছোবলে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে। এমন গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৃত রাজিয়ার স্বামী আর্শ্বেদ গাজী।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা গ্রামের আর্শ্বেদ গাজীর স্ত্রী রাজিয়া বেগম গত মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘুম থেকে জাগে। পরে তিনি বাড়ির পাশের একটি খালে ওজু করে এক বালতি পানি নিয়ে ঘরে ফেরেন। ওই পানির বালতি তিনি ঘরের বারান্দার তাকে রাখতে যান। এ সময় তাকে সাপে ছোবল দেয়; কিন্তু ওই সময় তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। পরে তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন তিনি। পরে তার ঘরে ঘুমিয়ে থাকা নাতনী সাদিয়াকে ডেকে তোলেন। তার নাতনী সাদিয়া প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। খবর পেয়ে নদীতে মাছ শিকারে থাকা তার স্বামী আর্শ্বেদ গাজী বাড়িতে চলে আসেন। তিনি এসে স্থানীয় দেলোয়ার ওঝাকে ডেকে আনেন। ততক্ষণে আড়াই ঘণ্টা চলে যায়।

ওঝা দেলোয়ার ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে রাজিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান বলে জানান স্বামী আর্শ্বেদ গাজী। পরে তাকে স্বজনরা পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এনে স্বজনরা তার দাফনের জন্য গোসলের ব্যবস্থা করেন। এমন সময় কয়েকজন নারী বলেন, রাজিয়া মারা যাননি। তিনি চোখে পলক দিয়েছেন। এমন খবরে এলাকার মানুষ আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে স্বামী আর্শ্বেদ গাজী স্ত্রী রাজিয়াকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মো: মনিরুজ্জামানও রাজিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ দিকে সাপের ছোবলে নারীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল গুজব ছড়াচ্ছে- রাসেল ভাইপার সাপের ছোবলে রাজিয়া মারা গেছেন। প্রকৃতপক্ষে কোন প্রজাতির সাপের ছোবলে রাজিয়া মারা গেছে তা পরিবারের কেউ বলতে পারেন না। অপর দিকে ওই নারীর মৃত্যুর এক দিন পরে স্থানীয়রা তার বাড়িতে যান। এ সময় তারা দেখতে পান- ঘরের বারান্দায় গর্তের ভেতরে একটি কালো ও চিকন সাপ প্রবেশ করছে। তাৎক্ষণিক ওই সাপ ধরতে ওঝা জাহাঙ্গীর ও রাজাকে ডাকা হয়। কিন্তু তারা গর্ত খুঁড়ে সাপ পাননি। শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
রাজিয়ার স্বামী আর্শ্বেদ গাজী বলেন, আমার স্ত্রী সাপের ছোবলে মারা গেছে; কিন্তু কোন প্রজাতির সাপে ছোবল দিয়েছে তা বলতে পারি না। নেটে গুজব শুনতে পাচ্ছি যে, রাসেল ভাইপার সাপে আমার স্ত্রীকে ছোবল দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরের দিন আমার ঘরে একটি সাপ দেখেছি তা চিকন ও কালো। ওঝা এনে ওই গর্ত খুঁড়েছি; কিন্তু সাপ ধরতে পারেনি। গুজবে কান না দেয়ার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।

প্রতিবেশী আব্দুস সোবাহান মুন্সি বলেন, ভাবী রাজিয়া বেগমের মৃত্যুর পরের দিন আমিসহ বেশ কয়েকজন ওই বাড়িতে যাই। বসে কথা বলছি এমন সময় ঘরের বারান্দায় চিকন ও কালো একটি সাপ গর্তে ঢুকতে দেখেছি। ওই সাপ দেখে আমরা হতবম্ভ হয়ে যাই।
স্থানীয় মোয়াজ্জেম হাওলাদার মাসুম কাজী, রিপন মিয়া, ফাহিম ও মাসুম হাওলাদার বলেন, সাপের ছোবলে নারীর মৃত্যু হয়েছে এটা সঠিক। কিন্তু কোন প্রজাতির সাপে ছোবল দিয়েছে তা কেউ দেখেনি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: চিন্ময় হাওলাদার বলেন, ওই নারীকে সাপে ছোবল দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাকে বাড়িতে বসে ওঝা এনে ঝাড়ফুঁক দিয়েছেন। ফলে বেশ সময় কেটে গেছে। তাই যথাসময়ে চিকিৎসা না দিতে পারায় তার মৃত্যু হয়।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।