১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নীলফামারীতে সড়ক ও রেলপথ যেন ধান আর খড় শুকানোর চাতাল

ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা
-

লোকমান হোসেন (৫৫)। বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের হাফেজ পাড়ায়। সম্প্রতি তিনি বাইসাইকেলে সড়ক পথে শহর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সড়কের হাজীপাড়া নামক স্থানে আসার পর তার সাইকেলের চাকা ও চেইনে খড় পেঁচিয়ে তিনি সড়কে পড়ে যান এবং সামান্য আহত হন। নীলফামারীর বিভিন্ন সড়কে বোরো ধান ও খড় শুকানোর কারণে এ রকম ছোটখাটো দুর্ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে।
দেখা গেছে নীলফামারীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের অর্ধেক স্থানই দখল করে সেখানে মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা। ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি তারা ধান ও খড় শুকানোর জন্য চাতাল হিসেবে ব্যবহারও করছেন ওই সব সড়ক। শুধু সড়ক নয় রেলপথও দখলে নিয়েছেন তারা। শুকানোর জন্য দেদারছে বিছিয়ে রাখা হয়েছে খড়। এমনভাবে রেললাইন ও রেললাইনের পাথরের ওপর খড় বিছিয়ে রাখা হয়েছে যে, দূর থেকে বুঝার উপায় নেই এটা রেললাইন। ট্রেন আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা রেললাইনের ওপর খড় শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে জেলার ব্যস্ততম ২৩ কিলোমিটার নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, ২২ কিলোমিটার নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়ক, ১৪ কিলোমিটার ডোমার-চিলাহাটি সড়ক, ১২ কিলোমিটার ডোমার-ডিমলা সড়ক, ২৫ কিলোমিটার নীলফামারী-ডিমলা সড়ক, ২০ কিলোমিটার জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কসহ ছয় উপজেলার গ্রামীন পাকা ও কাঁচা সড়কে ধান মাড়াই ও শুকানো কাজ করছেন কৃষকরা। এসব সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোরো ধান মাড়াই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এ ছাড়া ৫৩ কিলোমিটার নীলফামারীর চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলপথের বেশির ভাগ জায়গায় শুকানো হচ্ছে খড়। খড় শুকানোর পর তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে রেললাইনের দু’ধারে। আইন অনুযায়ী সড়কে ফসল, খড় বা বিচালীসহ অন্য কোনো কিছু শুকানো নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না কৃষককেরা।
কৃষকরা জানান, বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের বাড়িতে ধান ও খড় শুকানোর জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথের ওপর এক প্রকার ঝুঁকি নিয়েই ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করছেন। ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি মাস্টার পাড়ার কৃষক নুর আলম জানান, বোরো ধান উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। এই ধান কাটার পর দুই-এক দিনের বেশি রাখা যায় না। দ্রুতই মাড়াই ও শুকানোর কাজ সেরে ফেলতে হয়। তা না হলে ধান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সাধারণের চলাচলে অসুবিধা জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়েই এ কাজ করছেন তারা।
নীলফামারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জুয়েল ইসলাম জানান, আমরা সড়কের ওপর ধান ও খড় না শুকানোর জন্য অনুরোধ করে আসছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
নীলফামারী রেলস্টেশনের মাস্টার জয়ন্ত রায় জানান, আমরা বার বার নিষেধ করে আসছি। কিন্তু লোকজন তা মানছে না। নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ জানান, বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কগুলো দখল করে কৃষকরা ধান মাড়াইয়ের ও শুকানোর কাজ করছেন। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটার পরও তাদেরকে নিবৃত করা যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement