১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ভেসে উঠছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতচিহ্ন

রুনু-আলাউদ্দিনরা সব হারিয়ে নিঃস্ব চোখের জলেই এখন আকুতি

রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপর : নয়া দিগন্ত -


সাজানো সংসার ছিল মধ্যবয়সী রুনু-আলাউদ্দিন দম্পতির। কিন্তু সব হারিয়েছেন তারা সর্বনাশা রেমালের তাণ্ডবে। চোখের সামনেই মুহূর্তে একমাত্র ঘরটি দুমড়ে-মুচড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের চিহ্ন বলতে এখন আছে শুধু তাদের ভিটেটুকুই। দুই শিশু সন্তান আর শ্বশুরকে নিয়ে এখন তাদের দিন কাটছে মানবেতর। প্রতিবেশীদের দয়াতেই চলছে দিন। টেনেটুনে সংসার চালানো জেলে আলাউদ্দিনের ঘুরে দাঁড়ানোও এখন অসম্ভব। এ বিষয়ে রুনুর সাথে প্রতিবেদক কথা বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে বলে ওঠেন, ‘ভাইরে কী দিখতে আইছেন। এই বইন্যায় সব নিয়া গ্যাছে।’ আমাগো জায়গা সম্পত্তি কিছুই নাই। বাঁধে ঘর করে থাকছিলাম। হেই ঘরডাও নিয়া গ্যালো। ঘরবাড়ি ওঠানোর মতো সামর্থ্য নাই।’
রেমালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সাগরপাড়ের গ্রাম নয়ারচরের বেশির ভাগ পরিবারই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপর। সরেজমিন গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যন্ত এসব এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্বামীহারা ৮০ বছরের বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের ঘরটিও কেড়ে নিয়েছে জলোচ্ছ্বাসে। এখন বেড়িবাঁধের ওপর পলিথিনের ছাপড়া দিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তার সাথে আরেকটি পলিথিনের ছাপড়া দিয়ে বাস করছেন তার ছেলে-পুত্রবধূ আর নাতি-নাতনী। সুফিয়া বলেন, ‘কোনোরকম পলিথিন দিয়া মুড়া (ছাউনি) দিয়া থাহি (থাকি) বাবা।’

জেলে শাহজালাল মাঝির মা, স্ত্রী আর ছয় সন্তানসহ ৯ সদস্যের সংসার। কান্নারত শাহজালাল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে আমাগো সব নিয়া গেছে। প্রধামন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন- আমাদেরকে তিনি যেন থাকার মতো একটা মাথাগোঁজার স্থান করে দেন।’
এমন অবস্থা শুধু রুনু-আলাউদ্দিন কিংবা শাহজালালেরই নয়, নয়ারচর, চরমোন্তাজের চরআন্ডা, বউ বাজার, দক্ষিণ চরমোন্তাজ এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নসহ প্রায় চরাঞ্চলের মানুষজন কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন এমন দুশ্চিন্তায় পার করছেন প্রতি মুহূর্ত।
প্রশাসনের তথ্যমতে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় সাড়ে আট হাজার ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে দেড় হাজারেরও বেশি পুকুর ও ঘেরের মাছ। এতে ক্ষতি হয়েছে ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা। মারা গেছে ৫৭৭টি গবাদিপশু। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩০০। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অজিত কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেড় হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট এবং বেড়িবাঁধ মেরামত ও দুর্গতদের সহায়তায় ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
এ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন দুর্গতরা। তাদের বিশ্বাস পাবেন মাথা গোঁজার ঠিকানা, হবে টেকসই বেড়িবাঁধ এমন আশাতেই বিভোর এসব দুর্গত মানুষ।
রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমান বলেন, ‘এই ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। আমাদের মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পৌঁছে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাস্তাঘাট ও বেড়িবাঁধ মেরামত করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং গৃহহীনদের বাড়িঘরের ব্যবস্থা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। ঢেউটিন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। সুতরাং কোনো মানুষ কষ্টে থাকবে না।’


আরো সংবাদ



premium cement