১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
উপজেলা নির্বাচন

সখীপুরে ১৪ প্রার্থীর ৯ জনই আওয়ামী লীগের

সম্পদ বেশি বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থীর
-


টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চতুর্থ ধাপে আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ সময়ে প্রার্থীরা উপজেলার প্রতিটি গ্রাম-মহল্লা, হাটবাজার, মসজিদ-মন্দির ও মাঠে-বাড়িতে ভোট প্রার্থনা করে বেড়াচ্ছেন। সখীপুরের প্রার্থীদের যেন একটু বেশিই দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। কারণ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোট ১৪ জনের ৯ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্র্ণ পদে আছেন। তাই লড়াইটা যেন নিজেদের মধ্যেই হচ্ছে। একই পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এমন প্রার্থীও পরস্পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ নির্বাচনে।
চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন- সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত শিকদার (কাপ-পিরিচ), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক রফিক ই রাসেল (হেলিকপ্টার), বোয়ালী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাঈদ আজাদ (আনারস), টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক ভিপি ও জিএস এবং টাঙ্গাইল পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন চান (মোটরসাইকেল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজিব (গামছা) এবং উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহসভাপতি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন (ঘোড়া)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আছেন চার জন। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম ওরফে কাজী বাদল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিবলি সাদিক (চশমা), উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা আয়নাল হক (টিউবওয়েল) এবং জয়নাল আবেদীন (তালা)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীও চার জন। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহানারা আনোয়ার লুৎফা (প্রজাপতি), উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রিতা (কলস), সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মেহেরিন খাদিজা লতা (হাঁস) এবং উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আঁখি আতাউর (ফুটবল)।

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগের চার নেতার মধ্যে শওকত শিকদার বিএসসি পাশ। তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসা দেখিয়ে নিজেকে একটি টেলিকম দোকানের স্বত্বাধিকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাঈদ আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। পেশা কলেজের অধ্যক্ষ এবং ঠিকাদার, রড-সিমেন্ট ও হাঁস-মুরগির খাবার ব্যবসায়ী। রফিক ই রাসেল পরিবহন ব্যবসায়ী ও ক্লিনিক মালিক। পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন অধ্যাপনা। আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী আলমগীর হোসেন চান স্নাতকোত্তর। তিনিও নিজেকে ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সানোয়ার হোসেন সজীব এইচএসসি পাস। তিনি ইট, বালু ও খোয়া ব্যবসায়ী।
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) মো: ফারুক হোসেন হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। তিনি ঢাকায় একটি ওভারসিজ কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে ১২ লাখ টাকা। নগদ অর্থ, ব্যাংক ও স্থায়ী আমানত হিসেবে রয়েছে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, ‘আমি নিতে নয়; উপজেলাবাসীকে দিতে এসেছি।’
উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদারের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নগদ অর্থ, ব্যাংক ক্যাশ, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী, আসবাবপত্রসহ তার সম্পদের পরিমাণ ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। হলফনামায় তিনি স্ত্রীর কিছু স্বর্ণালংকার থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন।
বাড়িভাড়া, ব্যবসা ও শিক্ষকতা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদের বার্ষিক আয় ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৮ টাকা। এ ছাড়া নগদ অর্থ, ব্যাংক ক্যাশ, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী, আসবাবপত্রসহ তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৮ টাকা। এ ছাড়া নিজ নামে একটি দোতলা ভবন ও একটি মুরগির খামারের কথাও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক রফিক ই রাসেলের বার্ষিক আয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। তিনি নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক ভিপি আলমগীর হোসেন চানের আয়ের উৎস ব্যবসা। বাড়ি ভাড়া ও ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় পৌনে ৭ লাখ টাকা। রয়েছে ৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সানোয়ার হোসেন সজীবের পেশা ব্যবসা হলেও হলফনামায় ব্যবসা থেকে তিনি কোনো আয় দেখাননি। তবে অন্যান্য খাত থেকে তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে ১২ শতাংশ জমি।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, হলফনামার তথ্য প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এর পরও যদি কেউ কোনো বিষয়ে অভিযোগ করেন তাহলে বিষয়টি গুরুত্বসহ খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য, উপজেলার মোট ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ৩২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫৪ জন, নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৫৭৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন।


আরো সংবাদ



premium cement