১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

৩০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে নীরব প্রশাসন

শুটিবাড়ী বাজারের সরকারি সম্পত্তির ওপর গড়ে উঠেছে এসব স্থাপনা : নয়া দিগন্ত -

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার একটি হাটে যুগের পর যুগ ধরে বেহাত হয়ে থাকা সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। দখল হয়ে থাকা প্রায় সাড়ে চার একর সরকারি জমির আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় তিন শ’ কোটি টাকা। স্থানীয় প্রশাসন ও দখলদারদের সখ্যতায় ব্যর্থ হচ্ছে জায়গা উদ্ধারের সরকারি উদ্যোগ।
ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ী বাজারে দখল হওয়া এসব জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কয়েক শ’ দোকানপাট থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর এসব দোকানপাট ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দাগে শুটিবাড়ী হাটের মোট জমির পরিমাণ পাঁচ একর ৪২ শতাংশ। অবৈধ দখল রোধ ও হাট উন্নয়নে ২০০৯ সালে মাত্র দু’টি দাগ (৪৩০০ ও ৪৩০৯) ছাড়া হাটের চার একর ৪৮ শতাংশ জমি পেরিফেরির জন্য সুপারিশ করেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক।
সরেজমিন দেখা গেছে, চার একর ৪৮ শতক জায়গার মধ্যে আনুমানিক ৫০ শতক জায়গায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে দোকান শেড। এই শেডগুলোতে চাল, মাছ, শুঁটকি, মরিচ-পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উঠিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডালিয়া-ডিমলা রোডের জায়গাও বেদখল হয়ে দু’ধারে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও হোটেল রেস্তোরাঁ। ফলে ৩০ ফুট প্রস্থের রাস্তাটি এখন ১৮-২০ ফুটে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে বাজারের প্রাণকেন্দ্রের ভেতর দিয়ে গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার রাস্তাটি প্রস্থে ২০ ফুট হওয়ার কথা থাকলে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে তা অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে।
বাজারে আগত ব্যবসায়ীদের জন্য চার একর ৪৮ শতাংশ জমি পেরিফেরির জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এসব জায়গা দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। সঙ্কীর্ণ করে রাখা হয়েছে যানবাহন চলাচলের রাস্তা। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সরকারি জায়গায় গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো না ভাঙার আশ্বাস দিয়ে অবৈধভাবে দখলদারদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা তুলছেন কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
শুটিবাড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, সরকার যদি চায় তোহা বাজারের জায়গা খালি করবে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা চাই হাটবাজারের উন্নয়ন হোক এবং মানুষ সুবিধা পাক।
শুটিবাড়ী হাটের ইজারাদার আইয়ুব চৌধুরী জানান, জায়গা উদ্ধারের বিষয়টি প্রশাসনের। আমার দ্বারা তো জায়গা উদ্ধার সম্ভব না। এসিল্যান্ড কী করেন, আমার জানা নেই। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের জায়গা দখল হয়ে থাকায় এখন আমরা ভাড়া জায়গায় হাট পরিচালনা করছি। সরকারি সম্পত্তি সরকার উদ্ধার না করলে আমরা ভাড়া জায়গায় হাট বসিয়ে টাকা তোলে সরকারকে দেবো কেন?
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আকতার বলেন, ইতোমধ্যেই অভিযান চালিয়ে ৩০ শতাংশ জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। শিগগিরই বাকি জায়গাগুলোও উদ্ধার করা হবে।
নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিরোদা রানী রায় বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করার নামে কোনো জনপ্রতিনিধি বা প্রভাবশালী মহল যদি টাকা পয়সার দাবি করে এর দায়দায়িত্ব তাদের। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। কোনো জনপ্রতিনিধি বা প্রভাবশালী এ কাজ করে থাকলে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জানার জন্য নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষকে তার মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement