১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দু’টি ঘুমহীন রাত

কাউখালীতে এমন কোনো ঘর নেই ডুবেনি

রেমালের তাণ্ডবে ডুবে যাওয়া ফেরিঘাট : নয়া দিগন্ত -

ঘূর্ণিঝড় রেমালে লণ্ডভণ্ড হয়েছে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা। ঝড়ের শুরু থেকে টানা দুই দিন ঘুমহীন রাত কেটেছে উপকূল বাসিন্দাদের। কাউখালী সদর থেকে গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যে, বাড়ির বসতঘরের নিচতলা পানিতে ডুবেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরোপুরি নির্ণয় করা না গেলেও অনেকেই বলছেন শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এ উপজেলায়।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রোববার বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা রেমালের তাণ্ডব চলে উপকূল এলাকায়। এর প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়। রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে থাকে। এ উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এতে যে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়, তাতে উপকূলীয় এলাকার বাড়িঘর ভেঙে পড়ে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়।
ভারী বর্ষণ ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে এবং বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রবল বর্ষণ ও বাতাসের তোড়ে ফসলের ক্ষেত ভেসে যায়, উপড়ে পড়ে গাছপালা।
কাউখালী সদর থেকে গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়ির বসতঘরের নিচতলা পানিতে ডুবেনি। গ্রামগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। কাউখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ লাইনের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কাউখালীর অধিকাংশ গভীর নলকূপ পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, অন্তত ৪০টি মাছের ঘের, ২৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা দাস বলেন, ইরি ধানের ক্ষেত প্রায় ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করছি।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য খামারিরা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। কাউখালী ইউএনও সজল মোল্লা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, কাঁচা ঘর, ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান, সড়ক, বিদ্যুৎ ও বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনু বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement