দুর্যোগে রক্ষাকবজ এখন মরণফাঁদ
- পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
- ২৪ মে ২০২৪, ০০:০৫
কোথাও মূল ভবনে ফাটল আবার কোথাও দেবে গেছে ভবন রক্ষার ব্লক, সে সাথে ব্যবহারের আগেই অনেকটা অকেজো হয়ে গেছে গভীর নলকূপ। দায়সারা কাজ করে যেতে পারলেই যেন বেঁচে যেতে পারেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর কাজের মান নিশ্চিতে দায়িত্বরত যারা রয়েছে তাদের ভূমিকাও ছিল অপ্রতুল। এভাবেই যেনতেনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্যোগ কবলিত এলাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময়ে রক্ষাকবজ হিসেবে প্রধান আশ্রয়স্থল ‘মুজিব কিল্লা’। প্রকল্প হস্তান্তরের আগেই এমন বেহাল দশায় শঙ্কিত উপকূলীয় বাসিন্দারা। কলাপাড়ায় ২০টি এবং রাঙ্গাবালীতে ১৩টি মুজিব কিল্লার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ৪৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের দাসবাড়িসংলগ্ন মাটির কিল্লার স্লাব প্রটোকশনে চার ইঞ্চির বদলে তিন ইঞ্চি ব্লক ব্যবহার হয়েছে। নি¤œমানের সামগ্রীতে নির্মিত এ ব্লকের অধিকাংশ স্থাপনকালেই ভেঙেচুরে একাকার। ছাদের নিচে ভিমগুলো বাঁকা। একই চিত্র রাঙ্গাবালীর সদর ইউনিয়নের গঙ্গীপাড়া গ্রামের কিল্লা, ছোটবাইশদিয়ার কাউখালী ও কোড়ালিয়া গ্রামের দু’টি কিল্লা এবং কাউখালীতে নবনির্মাণকৃত মুজিব কিল্লাটির।
নয়া দিগন্তের ক্যামেরার সামনে নির্মিত এ ব্লক পাঁচ ফুট উচ্চতা থেকে মাটিতে ফেলে দিলে ভেঙে গুড়িয়ে যায়। কাউখালী কিল্লার ভিডিও চিত্র এলজিইডি ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদ্বয়কে দেখালে, তারা বলেন- নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং যথাযথ ভাইব্রেটিং, কিউরিং না হওয়ায় কলামের নানা অংশ খুলে পড়ছে।
কলাপাড়ার কিল্লাগুলো উপজেলা পরিষদ থেকে দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার। সোনাতলা মুজিব কিল্লা ও নবীপুর কিল্লার নির্মিত ব্লোক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভেঙে গেছে। গভীর নলকূপ বিকল। এলাকাবাসী বলছেন, উপকূলের যানমাল রক্ষায় মুজিব কিল্লার নামে মরণফাঁদ তৈরি করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।
দায়িত্বরত প্রকৌশলী জাকির হোসেনের কাছে বাস্তবচিত্র বর্ণনা করলে তিনি বলেন- নতুন মাটি হওয়ায় ক্র্যাক করছে। অনিয়ম ও নির্মাণে ত্রুটি হলে ভেঙে নতুনভাবে কাজ করা হবে।
এদিকে পটুয়াখালীর কয়েকটি মুজিব কিল্লার ভিডিওচিত্র এলজিইডি এবং গণপূর্ত বিভাগকে দেখালে প্রকৌশলীরা বলছে, ‘টিলায় ব্যবহৃত মাটি কম্প্যাকশন না করা, আরসিসি গ্রেডভিম নির্মাণে অনিয়ম-ত্রুটি, নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় অবকাঠামো ক্র্যাক করেছে। এ সবে আশ্রয় নিলে প্রাণহানি ঘটবে আশ্রয়ীদের।’
অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ মুজিব কিল্লার গভীর নলকূপের দুই-তৃতীয়াংশ বিকল। আরো অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের আর্থিক সুবিধা নিয়ে দফতরে অবস্থান করেই প্রকল্প তদারকি করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং ইঞ্জিনিয়ারসহ দায়িত্বরতরা।
এ ছাড়াও ৩৩টি প্রকল্প তদারিকতে মাঠ পর্যায়ে একজন ইঞ্জিনিয়ার থাকায় তদারকিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী উপজেলায় মুজিব কিল্লা নির্মাণে দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার কাওসার আহম্মেদের কাছে প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব কাগজপত্র তার কাছে নেই। ত্রুটিযুক্ত কাজ পুনরায় করা হবে।
নি¤œমানের কাজের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
নির্মাণাধীন মুজিব কিল্লার বিষয়ে রাঙ্গাবালী-কলাপাড়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হুমায়ুন কবির বলেন, ভাঙাচুরা এসব তথ্য আমার কাছে নেই। যদি থাকে তা হলে ব্যবস্থা নেব। এ প্রকল্পের আরো তথ্য জানতে চাইলে তিনি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা