১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দখল হয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের পুরনো কাদিরাবাদ দীঘি

ভরাট হয়ে যাওয়া কাদিরাবাদ দীঘি : নয়া দিগন্ত -

দুইশ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কাদিরাবাদ দীঘি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে স্থানীয় একটি মহল। তৎকালে হিন্দু জমিদার স্থানীয় মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে এই দীঘিটি খনন করেন। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাট থানার লতা ইউনিয়নের কাদিরাবাদ গ্রামের এই দীঘি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে এলাকার জমিদার কালাচান দত্ত কাদিরাবাদ গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে দীঘিটি খনন করেন। সেই থেকে এটি স্ব মহিমায় টিকে আছে। দেশ ভাগের পর জমিদার কালাচান দত্ত দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এর পর এটি তার রেখে যাওয়া স্মৃতি হিসেবে রয়ে যায়। পরে দীঘির জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। কালের বিবর্তনে এটি আজ জৌলুস হারিয়ে মরা দীঘিতে রূপ নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই সুযোগে দীঘির পার্শ্ববর্তী একটি মহল (ভূঁইয়া ও আকন পরিবার) দীঘির পূর্ব পাড়ে পাকা একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। দীঘিটি তাদের বলে দাবি করে তারা একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করতে থাকে। সম্প্রতি ওই চক্রটি দীঘি ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তাদের দাবি তারা দীঘির জমির মালিক।
দীঘির পার্শ্ববর্তী বসির আকনের ছেলে আলাউদ্দিন আলো আকন ও সামছু আকন, শাহ আলম ভূঁইয়া, সোবহান ভূঁইয়া, সবুজ ভূঁইয়া জমির মালিকানা দাবি করে তারা দীঘির পাড়ের জমিতে এবং দীঘির পাশের কিছু অংশ ভরাট করেছে। চক্রটি দীঘির পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর পাড় ভাগবাটোয়ারা করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রতি পাড়েই স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করছে। বিষয়টি স্থানীয়রা পরিবেশ অধিদফতরের নজরে আনলে বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ পান।
দীঘির মালিকানা দাবিদার শাহ আলম ভূঁইয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এই জমি তাদের পূর্ব পুরুষ এফাজ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার বন্ধু বসির আকন যৌথভাবে ক্রয় করেছেন। দীঘি আমাদের তাই আমরা স্থাপনা নির্মাণ করছি। দীঘি ভরাট করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে এই বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন অনুমতি লাগলে আবেদন করব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার বরিশালের সমন্বয়কারী লিঙ্কন বায়েন বলেন, হোক ব্যক্তি মালিকানা জমি, যদি ভূমির কাগজপত্রে এটা দীঘি থাকে তা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার কোনো সুযোগ নেই। আর শত বছরের দীঘি স্ব-মহিমায় টিকে থাকলে তখন কেউ এর মালিক ছিল না। এখন মালিক জন্ম নিয়ে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ হয় কিভাবে? এটা দুঃখজনক। আশা করব জেলা প্রশাসক দ্রুত দখলদারদের উচ্ছেদ করে দীঘিটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নিবেন।
পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল জেলা কর্মকর্তা কামাল মেহেদি জানান, অভিযোগ পেয়ে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। জমিটির মালিকানার বিষয়ে কাগজপত্র দেখছি। এটা সরকারের খাস খতিয়ানের কি না তাও দেখা হচ্ছে। তবে তদন্তকালে ভূঁইয়া ও আকন পরিবার দীঘিটি নিজেদের বলে দাবি করছে। তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এখন পরিবেশ অধিদফতর সব কিছু যাচাই-বাছাই করে দীঘি রক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, জলাশয় বা দীঘি ব্যক্তি মালিকানার হলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেটি কেউ ভরাট করতে পারবে না। আর সরকারি হলে তো তারা অবৈধভাবে ভরাট ও দখল করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement