১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি

মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর সনদ পাননি বিধবা নূর আয়েশা

-


চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব মারা গেছেন ১২ বছর আগে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সব প্রমাণ থাকার পরও জীবিতকালে তিনি তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখে যেতে পারেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর চরম অভাব অনটনে থাকা তার স্ত্রী স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য তদবির করতে থাকেন। এক পর্যায়ে যার মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন তিনিই বলেন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়া হলে তার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাওয়া যাবে। তিন দফা যাচাই বাচাইয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার স্বামীর নাম থাকা সত্ত্বেও টাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাচ্ছেন না।
যুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দেয়ার সময় স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ দেন মুহাম্মদ আতাউল গনী ওসমানি। প্রাক্তন এমএনএ ও গণপরিষদ সদস্য আবু ছালেহ কর্তৃক তৈরিকৃত তালিকায় তার নাম রয়েছে ১৯ নম্বরে। এরপর ২০২১ সালে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির পাঠানো ক-তালিকায় তার নাম রয়েছে ৯ নম্বরে।

নূর আয়েশা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর একদিন লোহাগাড়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার তাকে ডেকে উপজেলায় জমা হওয়া তার স্বামীর সব কাগজপত্র দিয়ে বলেন, আপনার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য চেষ্টা করছেন না কেন? এটাতো হয়েই আছে। এ কথা শুনে নূর আয়েশা সকল কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় যান। ওই নেতা সহায়তার জন্য একজন লোক সাথে দিয়ে নূর আয়েশাকে কাকরাইল অফিসে পাঠান। অফিসের লোকজন বলে এখন পারা যাবে একটা আবেদন লিখেন। আমি আবেদন লিখে জমা দিই। তারা আমাকে ফটোকপি দেয় এবং তাদের মোবাইল নম্বরও দেয়। এক-দুই বছর পরও কোনো খবর না পাওয়ায় আমি যার মাধ্যমে কাকরাইল অফিসে যাই তার সাথে দেখা করি। তিনি বলেন আপনার কাজ হয়ে যাবে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। নুর আয়েশা আরো বলেন, গত বছর জুনের ১৫ তারিখ ঢাকার অফিস থেকে আমাকে আবার ডাকা হয়। ঢাকার কাকরাইলের অফিসের ১১ তলায় আমার কাছ থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এমপিসহ অনেকে সাক্ষাৎকার নেন।

পরে অফিসের একজন আমাকে তার মোবাইল নং দিয়ে বলেন আগের অফিসার বদলি হয়ে গেছে, আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। তিনি পিয়নের মোবাইল নম্বরও রাখতে বলেন। আমি দু’টি মোবাইল নম্বর রাখি। পরে তাদের ফোন করলে ফোন রিসিভ করে না। নূর আয়েশার স্বামী মরহুম আবু তালেবের ফাইল নং-ক। ২০১৭ সালের যাচাইবাচাই তালিকায় ৯ নম্বর সিরিয়ালে আছে। ফাইলটি এখন স্কাউট ভবনের ১১ তলায় মুক্তিযোদ্ধা অফিসে জমা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নূর আয়েশা।
মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবু তালেবের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শুক্কুর বলেন, ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে আমরা একে একে ফটিকছড়ি জুইগ্যাছোলা বাজার, চট্টগ্রামের কালুরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরারেশন চালাই। আবু তালেব শত্রুর সাথে যুদ্ধের সময় স্বাভাবিক থাকতেন। তার মধ্যে কোনো অস্থিরতা বা ভয় দেখতাম না। মুখে হাসি লাগিয়ে রাখতেন।


আরো সংবাদ



premium cement