১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিলাসবহুল টেপাখোলা রিসোর্ট নির্মাণে কাটা হচ্ছে ৩১টি প্রাচীন গাছ

টেপাখোলা লেকপাড়ের কেটে ফেলা হচ্ছে ৩১টি পুরনো গাছ : নয়া দিগন্ত -

ফরিদপুরের সোহরাওয়ার্দী সরোবর তথা টেপাখোলা লেকপাড়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট’ নামে এক বিলাসবহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ। ইতোমধ্যে গাছগুলো কেটে ফেলার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। গাছগুলোর গায়ে খোদাই করে এঁকে দেয়া হয়েছে চিহ্ন। আর এ নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে উঠছে নানা গুঞ্জন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট নামে এ প্রকল্পটি পাস করানো হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত প্রচেষ্টায় মূলত এ প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে যায়। নকশা অনুযায়ী এ টেপাখোলা রিসোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, টেপাখোলা রিসোর্ট স্কুল ব্লক, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, রিসোর্ট সেন্টার, ভিকটোরি মিউজিয়াম, ভিকটোরি কমপ্লেক্স, ওয়ান্ডার হুইল, ফুড কোড, সিনিয়র সিটিজেন কর্নার, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট সেন্টার, চিলড্রেন সুইমিংপুল, টেপা ক্যাফে ও হল, অ্যাম্পিথিয়েটার ও বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙার টাওয়ার তৈরির কথা। তবে পরে বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙার টাওয়ারটি বাদ দিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে আজাদ আগামী এক মাসের মধ্যে এ রিসোর্টের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে এলজিইডি ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিদুজ্জামান খান জানিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির ওপর অবস্থিত। লেকসহ আশপাশে সব মিলে ১৮ একর জমিতে লেকের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক। আর এ কাজে প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
এ দিকে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্বপাড়ে এবং দক্ষিণপাড়ের সড়কের পাশে অবস্থিত গাছগুলোর বেশির ভাগই মেহগনি গাছ। এর পাশাপাশি, আম, কাঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলোর বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। এরই মধ্যে সেগুলোর শক্ত বাকল কেটে লাল রঙ দিয়ে সংখ্যা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যেকোনো সময়ে সেগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে লেকের পানি সেচের কাজ শুরু হয়েছে।
তবে এ গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নগরায়নের যুগে শহরবাসীর প্রাতঃভ্রমণ, বৈকালিক হাঁটা এবং স্বস্তির নিশ্বাস নেয়ার একটি বড় স্থান এ লেকপাড়। সারা বছর শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে সর্বস্তরের লোকজন ছুটে আসেন এ লেকপাড়ে কিছুটা অবসর সময় কাটাতে। স্থানীয় সজিব মিয়া বলেন, এ গাছগুলো ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভাণ্ডার। এলাকার সব পর্যায়ের মানুষই এ গাছতলার এসে বিশ্রাম নেন, প্রাণ জুড়ান। আমাদের সবার উদ্যোগে গাছ কাটার এ পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। গাছগুলো রক্ষা করেও এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, কোনো যুক্তিতেই পুরনো গাছগুলো কেটে ফেলার বিষয়টি আমাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। অবশ্যই গাছগুলো রক্ষা করতে হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।
ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাকাহীদ হোসেন বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন এবং ওই গাছগুলো রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়। ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি এক হাজার ৭৬২টি গাছ রোপণ করা হবে। এমন একটি দৃষ্টিনন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement