উত্তরাঞ্চলে আবহাওয়ায় মরু রুক্ষতা
- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা)
- ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
দেশের উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরু রুক্ষতা। খাল বিল নদী শুকিয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। বেড়েছে আর্সেনিকের মাত্রা। দুঃসহ গরম, প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষেতে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন। মানুষ ও পশু-পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত। উত্তরাঞ্চলের ৪৬টি নদ-নদী ক্রমাগত পলি বালু ও আবর্জনা পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে আড়াই হাজার কিলোমিটার নৌপথ। ব্যবসা নেই নৌযানের। পদ্মা ও তার শাখা নদীগুলো স্বয়ংক্রিয় পরিশোধন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় পলি বালু জমে ভরাট হয়ে গেছে।
নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীতে পানি প্রবাহের মাত্রা ৪০ হাজার ঘনফুট হলে তাতে আর পলি বালু জমতে পারে না। স্রোত নেই বলেই তো পলি বালু জমছে। ১৪টি শাখা নদী ও ৩২টি উপনদী এই মোট ৪৬টি নদ-নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। উত্তরের ১৬ জেলায় আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে ১৭টি। এগুলো হচ্ছে- রাজশাহী-নবাবগঞ্জ সীমান্তে গঙ্গা, পাগলা, দিনাজপুর ও নওগাঁয় আত্রাই, পুনর্ভবা ও তেতুলিয়া। ঠাকুরগাঁওয়ে কুলিক বা কোকিলা, পঞ্চগড় ও নবাবগঞ্জে মহানন্দা, করতোয়া ও তলমা। নীলফামারী জেলায় ঘোড়ামারা, দিওনাই যমুনেশ্বরী, বুড়ি তিস্তা ও তিস্তা। কুড়িগ্রামে দুধ কুমার, ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম। লালমনিরহাটে জলঢাকা ও দুধ কুমার জনপদ রচনায় ও ইতিহাস রচনায় উপাদান হয়ে আছে এসব নদ-নদী।
উত্তরের ১৬ জেলায় ভূখণ্ড নির্ণয় ও সমৃদ্ধ করেছে নদ-নদী। এক ইছামতি নদী রয়েছে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায়।
নদীর পানিই বাঁচিয়ে রাখে জীবন। নদীর পানি পরিবেশের প্রধান উপাদান। যা মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গসহ সব জীবকে লালন করে। মাটি ও মানুষকে করে সজীব। সামাজিক জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সভ্যতা সংস্কৃতিতে নদ-নদীর প্রভাব অপরিসীম। পদ্মা নদীর বদৌলতে ইছামতি নদী তীরে গড়ে উঠেছিল পাবনা বন্দর। নদী, নৌপথ আর নৌযাকে ঘিরেই এ অঞ্চল হয়ে উঠেছিল ব্যবসা প্রধান। পদ্মা ও যমুনা সৃষ্টি করেছে এই জনপদ। উর্বর করেছে মাটি। মূলত এ দু’টি নদীই দিয়েছে শক্তি। বাড়িয়েছে সবুজের সমাহার। জেলেকে করেছে সমৃদ্ধ। বৈজ্ঞানিক দিক থেকে পানি ও বাতাসের সাথে মানুষের রক্তের নিবিড় সম্পর্ক। এ অঞ্চলে রয়েছে পলি মাটির প্রলেপ দেয়া বিশাল সমতল ভূমি।
উত্তরাঞ্চলের নদী অববাহিকায় স্বর্ণাভ মাটিতে ফলে বাদাম, সোনালী আঁশ, আখ, ধান, গম, সরিষা, কালাই, শাকসবজি প্রভৃতি। উপনদী মহানন্দা, নাগর, টাংগন ৩৬ কিলোমিটার প্রস্তের এ নদী ভোলাহাট থেকে গোদাগাড়ী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখন এসব নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ১৭৮৭ সালের প্লাবনে তিস্তা নদী পদ্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মিলিত হয় ব্রহ্মপুত্রের সাথে। এতে নাগর, পুনর্ভবা, মহানন্দা আত্রাই প্রভৃতি নদীর প্রবাহ কমে যায়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে পাবনার চাটমোহরের করতোয়া নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নদী রেখা মুছে যায়। সেচব্যবস্থা গভীর-অগভীর নলকূপ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। সুপেয় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুঃসহ গরম, প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষেতে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন, মানুষ ও পশু-পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত।
পাবনা জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে পদ্মা, পূর্বে যমুনা, উত্তরে বড়াল এবং হুড়াসাগর নদী। জেলার মানচিত্র অনেকটা ত্রিভূজ আকারের। এ নদীগুলোর কল্যাণে নির্ধারিত হয়েছে এ জনপদের সীমারেখা। এ জেলায় ২০টি নদীর মধ্যে আরো রয়েছে পাবনার ইছামতি, বেড়ার হুড়াসাগর, কাকেশ্বরী, সুতিখালি, চাটমোহরের বড়াল, করতোয়া, গুমানী, ফরিদপুরের গোহালা, জলকা, খলিশাডাঙ্গী, শালিকা, আটঘড়িয়ার চিকনাই, চন্দ্রবতী, রতœাই, কমলা, ঈশ্বরদীর ট্যাপাগাড়ী, সুজানগরের বারনাই, বাদাল ও সাঁথিয়ার আত্রাই।
রাজশাহী জেলার প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে, পদ্মা (গঙ্গা), মহানন্দা, বড়াল, বারনাই, শিব ও ফকিরনী। রংপুরের তিস্তা, আলাইকুসারী, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী, আখিরা, চিকলী, চিলমারী। দিনাজপুরের ভূগোল ১৯টি নদীর মধ্যে নানা কারণে প্রায় মুছে গেছে তিলাই, মাহিলা, বেলান, ভেলামতি, গর্ভেশ্বরী, চিরির এবং সোয়া। আংশিক রয়ে গেছে তুলসীগঙ্গা, পাথরাজ, ইছামতি, কাঁকড়া ও টাঙ্গন। দিনাজপুরের ঢেপা, পুনর্ভবা, কাঞ্চন, যমুনা, আত্রাই, খরখরিয়া, তুলসীগঙ্গা, ইছামতি, চামতি, সবগাড়ী, ও ভাদই। রুগ্ণ হয়ে পড়েছে বরেন্দ্র ভূমির মধ্য অংশকে পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগ করে প্রবাহিত আত্রাই নদী। মান্দা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই পড়েছে চলনবিলে। আরো রয়েছে নাটোরের নন্দকুজা, নারদ, আদামদীঘির ইরামতি, স্বর্ণামতি, গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, ক্ষীণধারার করতোয়া, জয়পুরহাটে ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, হারাবতি ও ছিরি। লালমনিরহাটে জলঢাকা, ধরলা, নীলফামারির বুড়িতিস্তা, চিকি বুল্লাই, চিকনী, খড়খড়ি ও যমুনেশ্বরী। একই নদী কয়েকটি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদী খনন না করায় নওগাঁ জেলার ১০টি নদী নব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এগুলো হচ্ছে- আত্রাই, ছোট যমুনা, পূনর্ভবা, শিব, ফকিরনী, নলামারা, গুরনই, নাগর, চিরি ও তুলসীগঙ্গা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা