১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এক নারীতে ধরাশায়ী চার আওয়ামী লীগ নেতা

বরগুনার রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়
-

বরগুনায় এক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ধরাশায়ী দুইজন চেয়ারম্যান এবং এক আওয়ামী লীগ ও এক ছাত্রলীগ নেতা। ঘটনা সবার সামনে আসে আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়া নিয়ে।
ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার আগে গত ১২ এপ্রিলের রাতে অভিযুক্ত নারী ইসরাত জাহান লামিয়া ও তার সহযোগী স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকির বিরুদ্ধে তালতলী থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু। পরবর্তীতে তিনি নিজেও একইভাবে ফেঁসে যেতে চলেছেন।
প্রথমে গত শুক্রবার ওই নারীর সাথে বরগুনার তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর এক মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি অন্তরঙ্গ ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর একদিন পর এই তরুণীর সাথে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরালের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে সারা জেলায়। ছাত্রলীগ নেতা বাদে ভিডিও ভাইরাল হওয়া দুই ইউপি চেয়ারম্যানই স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ দিকে মামলার বিবরণে বাদি কামরুজ্জামান বাচ্চু উল্লেখ করেন, ঘটনার প্রায় এক বছর আগে অভিযুক্ত নারী তার হোয়াটস অ্যাপে কল করে। তিনি বলেন, প্রথমে আমি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে কল রিভিস করি। ওই নারী জানায়, পরিচিত মনে করে ভুলবশত ফোন চলে গেছে। এ সময় ওই নারী জানান, তিনি ঢাকায় এলএলবিতে অধ্যয়নরত।
চেয়ারম্যান বলেন, পরিচয়ের কয়েক দিন পর ঢাকায় কাজের জন্য গেলে ওই নারী আমার সাথে দেখা করতে চান। আমরা একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করি। এর অনেক দিন পর অফিসিয়াল কাজ শেষে ঢাকা থেকে ফেরার পথে লঞ্চে আমার কেবিনের পাশে তিনিও কবিন ভাড়া নেন। পথিমধ্যে রাতে এক সময় সে আমার কেবিনে আসেন এবং আমরা একসাথে রাতের খাবার খাই। খাওয়া শেষে আমি তাকে কেবিনে যেতে বললে তিনি আমার কেবিনেই ঘুমিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে তার মোবাইলের মাধ্যমে গোপন ভিডিও ধারণ করেন তিনি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, লামিয়ার ধারণ করা সেই ভিডিও গত বছরের ২৮ আগস্ট তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান তনুর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমার মোবাইলে পাঠানো হয়। একই সময়ে তিনি পচাকোড়ালিয়ার চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর দু’টি ভিডিও আমাকে পাঠান। পরে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে আমাকে বলেন, আমার বড় ভাই মনিরুজ্জামান মিন্টুর পক্ষে উপজেলা নির্বাচন না করলে তোমাদের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেব। এ সময় লামিয়া আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করেন।
তালতলী থানায় দায়েরকৃত ওই মামলা সূত্রে জানা গেছে পর্নোগ্রাফি আইনে চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু মামলটি দায়ের করেন। মামলাটি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশিরুল আলম জানান, চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত আবেদন করলে আমরা ওই নারী ও তার সহযোগী সবুজ ফকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং আমরা ইতোমধ্যে কিছু আলামতও উদ্ধার করি।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ইতোমধ্যে আমার প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এক তরুণীর এডিট করা ভিডিও দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement