চিরিরবন্দরে সেচের কাজে এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে সেঁউতি-দোন
- আফছার আলী খান চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
- ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
হারিয়ে গেছে এক সময়ের জনপ্রিয়, পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী কৃষি যন্ত্র সেঁউতি বা জাত ও দোন। আগেকার দিনে কৃষকদের গ্রামে গ্রামে জমিতে দোন, সেঁউতি বা জাত দিয়ে জমিতে সেচ দিতে দেখা যেত। এতে খরচও কম হতো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আধুনিকায়নের ফলে যন্ত্রসভ্যতার যাঁতাকলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন কৃষিযন্ত্র সেঁউতি, দোন, জাত ও ডোঙা। একসময় গ্রামবাংলার কৃষিক্ষেত্রে টিন বা বাঁশের তৈরি দোন ও সেঁউতির ব্যাপক চাহিদা ছিল। নদী-নালা, খাল-বিল নিকটবর্তী এলাকার কৃষি জমিতে সেচ কাজে এসব ব্যবহার করা হতো। মূলত কাঠ দিয়ে দোন তৈরি করা হয়।
দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা ইছামতি নদী। এ নদীর বুকে কৃষকরা সমতল জমি তৈরি করে চাষ করছেন ইরি-বোরো ধান। উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের খামার সাতনালা গ্রামে এখনো দোন, সেঁউতি বা জাত দিয়ে ইছামতি নদী থেকে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা।
সাতনালা গ্রামের হেদল পাড়ার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, প্রতি বছর এ মৌসুমে জাতের সাহায্যে ইছামতি নদী থেকে জমিতে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি। ২০ বছর আগে তিনি দিনাজপুরের দক্ষিণ কোতোয়ালির কমলপুর থেকে এ জাত সংগ্রহ করেন। এ জাতের মাধ্যমে একাকী সেচ দেয়া যায়। সেঁউতি দিয়ে জমিতে সেচ দিতে দু’জন লোকের প্রয়োজন হয়। শ্যালোমেশিনে সেচ দিতে খরচ বেশি পড়ে।
কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, হামরা (আমরা) বাপ-দাদার ঘরক দোন ও সেঁউতি দিয়া জমি বাড়িত পানি দিবার দ্যাখিচি (দেখছি)। হামরা ম্যাশিন কিনিমো কি দিয়া। এখন আধুনিক মেল্লা যন্ত্রপাতি বাজারত পাওয়া যাওয়ার কারণে এ্যাইলার (এগুলো) ব্যবহার তেমন হয় না।
উপজেলার রানীরবন্দরের ইছামতি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আতাউর রহমান জানান, ছোটবেলায় দেখেছি কৃষকরা সেঁউতি, দোন বা ডোঙা দিয়ে খাল হতে পানি সেচ দিত তাদের জমিতে। আধুনিক যন্ত্র সভ্যতা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক আমাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি সভ্যসমাজ ও অনাগত জাতির চেনার জন্য চালু রাখা প্রয়োজন।
উপজেলার রানীরবন্দর সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক সফিকুল আলম (সফি) বলেন, নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেঁউতি, দোন, জাত ও ডোঙার ব্যবহার আর আগের মতো চোখে পড়ে না। সহজ এসব পদ্ধতিগুলো বহুকাল থেকে গ্রামবাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা