১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বোয়ালমারীতে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাটাগড়ের মেলা শুরু

দোকানিরা নানা মিষ্টিদ্রব্য নিয়ে এসেছেন কাটাগড়ের মেলায় : নয়া দিগন্ত -

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়ে প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে মেলা। সাধক পুরুষ দেওয়ান শাগের শাহের বার্ষিক ওরস উপলক্ষে বসে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা। এবারও কাটাগড়ে বসছে এ মেলা।
এলাকাবাসী জানান, প্রতি বছর বাংলা চৈত্র মাসের ১২ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা শুরু হলেও রেশ থাকে সপ্তাহব্যাপী। ফার্নিচারসহ বিভিন্ন মিষ্টি-সামগ্রীর মেলা চলে এক মাস ধরে। ১২ চৈত্র মূল মেলার দিন। ওই দিন লোক সমাগম বেশি হয়।
এ বছর মাজারের পাশে প্রায় এক হাজার একর জায়গাজুড়ে মেলা বসেছে। পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, জাদু ও নাগরদোলা বসেছে মেলায়। এ ছাড়া ফার্নিচার, সাজ-বাতাসা, মিষ্টির দোকান, হোটেল, বাহারি খাবারের দোকান, নানা ধরনের খেলনার দোকান গড়ে উঠছে।
মেলা শুরুর সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারোর। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন দেওয়ান শাগের শাহ রহ:। ধারণা করা হয় ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। ১৮ শতকের প্রথম দিকে মারা যান এ আধ্যাত্মিক সাধক। তার মৃত্যুর দিন ভক্তরা জড়ো হয়ে ওরসের আয়োজন করে। কালক্রমে সে ওরস ঘিরে জমে ওঠে এ ঐতিহ্যবাহী মেলা।
স্থানীয় কলিমাঝি গ্রামের বাসিন্দা এস এম মহব্বত বলেন, প্রতি বছর এ মেলা ঘিরে অত্র এলাকায় ভিন্ন রকমের আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলা ঘিরে অন্তত আশপাশের কয়েক শ’ গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।
বনমালীপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, শুরুর প্রায় এক মাস আগে থেকে এলাকায় ভিন্ন রকমের আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলার সময় আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার রীতি চালু রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইসরাফিল মোল্লা বলেন, কাটাগড়ের মেলার প্রধান ঐতিহ্য হচ্ছে চিনির তৈরি সাজ-বাতাসা ও কদমা। মেলায় আগতরা মাটির পাতিলে (খুঠি) সাজ-বাতাসা ও কদমা কিনে বাড়ি ফেরেন।
রুপাপাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো লাখো মানুষের ভিড় জমেছে মেলায়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেলা সমাপ্ত হবে বলে আশা করি। শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, কাটাগড়ের মেলা এ এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ। মেলা ঘিরে আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। কাছে-দূরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এ মেলায়।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement