৩ শতাধিক দখলদারের কব্জায় রামগতি বাজার খাল
- রেজাউল হক রামগতি (লক্ষ্মীপুর)
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতিরহাট বাজারে স্থাপিত অফিসে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে কার্যক্রম চলে আসছে বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়ন ভূমি (তহশিল) অফিসের। সরকারি জমি দখলমুক্ত রাখা এ দু’টি অফিসের দায়িত্ব হলেও অফিস দু’টির মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে দখল হয়ে গেছে একটি সরকারি খাল। ‘রামগতি বাজার খাল’ নামক খালটি স্থানীয় তিন শতাধিক প্রভাবশালী দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করায় সেটির অস্তিত্ব এখন বিলীনের পথে। এতে করে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। প্রশাসন এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে এখন দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দশক আগে উপজেলার চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা এ খাল দিয়ে এলাকার পানি মেঘনা নদীতে নিষ্কাশন হতো। কিন্তু খালটি বাজারসংলগ্ন হওয়ায় তিন যুগ আগে এটি দখলদারদের কবলে পড়তে থাকে। খালটি দখল করে ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ৩০০ দোকানঘর।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খালের ওপর নির্মাণ করা দোকানঘরে জননী টেলিকম, বিসমিল্লাহ হোটেল, সৌদিয়া বস্ত্র বিতান, সুমাইয়া হোটেল, সোহেল ইলেকট্রনিকস, মা ক্রোকারিজ, রফরফ স্টোর, অপরূপ হোন্ডা সার্ভিসিং সেন্টার ও মেঘনা স্টুডিওসহ প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এগুলো ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দখলদাররা। আর এ টাকার একটা অংশ স্থানীয় রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দফতরের কর্তাব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক মোস্তাফা, আবুল কালাম ও গোলাম রহমানসহ বেশ কয়েকজন জানান, এক সময় এ অঞ্চলের কৃষকদের জমির পানি রামগতি বাজার খাল দিয়ে মেঘনা নদীতে যেত। তাদের কৃষি জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা ছিল এ খাল। অথচ, খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যার কারণে, তারা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন জনপ্রতিনিধি জানান, রামগতি বাজার খাল দখল করে নির্মাণ করা দোকানঘর থেকে মাসিক চাঁদা তোলা হয়। যার একটা অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসকে দেয়া হয়। যার কারণে তারা শুধু দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করেই কাজ শেষ করেন, উচ্ছেদের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেন না।
এ দিকে খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল বাসেত নামের এক প্রভাবশালী জানান, ওই খালটি তাদের জায়গার খনন করা হয়েছে। যে কারণে তারা খালটি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন।
নাছির উদ্দিন ও মাঈন উদ্দিন নামের আরো দুই দখলদার জানান, তাদের দোকানের কিছু অংশ খালের উপর পড়েছে। সরকার চাইলে তারা খালের জায়গা ছেড়ে দেবেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা দখল ছেড়ে দিতে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নোটিশ বা নির্দেশনা পাননি।
বড়খেরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, আমি এ অফিসে নতুন যোগদান করেছি। শুনেছি রামগতি বাজার খাল দখল করে নিয়েছেন এমন তিন শতাধিক দখলদারকে চিহ্নিত করে উপজেলা ভূমি অফিসে তালিকা পাঠানো হয়েছে। দখলদারদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।
রামগতি উপজলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমজাদ হোসেন জানান, রামগতি বাজার খাল দখলের বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে খালটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, এসিল্যান্ডের সাথে আলোচনা করে খালটি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা