শুঁটকি মাছে ভাগ্য বদল চলনবিলের মানুষের
- সোহেল রানা রায়গঞ্জ ও লুৎফর রহমান তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
শুঁটকি মাছের গন্ধ পেলেই অনেকের জিবেয় পানি চলে আসে। শুঁটকি মাছের ভর্তা ও নানান রকম পদের খাবার বেশির ভাগ মানুষেরই খুব প্রিয়। আবার কেউ কেউ শুঁটকি মাছের নাম শুনলেই নাক সিটকান। এ মাছের একটি আলাদা সুগন্ধ ও স্বাদ রয়েছে। চলনবিল থেকে ধরা দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ শুঁটকি তৈরি করে ভাগ্য বদল করেছেন অনেক পরিবার। এই শুঁটকি মাছ দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন এখানকার নি¤œ আয়ের মানুষজন। সেই সাথে জাতীয় আয়েও অবদান রাখছেন তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার মাছের আড়তে শুঁটকি মাছ শুকানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। মাছে লবণ মাখানো, মাপজোক করা, বহন করে মাচায় নেয়া ও মাছ বাছাই করে শুকানোতে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। আর এসব কাজের বেশির ভাগই হয় নারীদের হাতে। মহাজন শুধু মাছ কিনেই দায়মুক্ত। চলনবিলের মিঠা পানির শুঁটকি মাছের বেশ সুনাম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার পাশেই তৈরি হয় বিশাল এলাকাজুড়ে শুঁটকি মাছ তৈরির কারখানা।
তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটির শুঁটকি ব্যবসায়ী নান্নু, জাহিদুল ও আলম বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দেশী শুঁটকি মাছের ব্যবসা করে আসছি। চলনবিলের মিঠা পানির পুঁটি মাছের শুঁটকির স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদাও অনেক বেশি। বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু করে তিন থেকে চার মাস চাতালে শুঁটকি মাছ শুকানোর কাজ চলে। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ টন শুঁটকি উৎপাদন করে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ শুকাতে ১৪ জন নারী-পুরুষ কাজ করে যাচ্ছেন। দৈনিক ৮ থেকে ১০ মণ মাছ চাতালে শুকানো হয়। ১ কেজি তাজা মাছ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনতে হয়। ৩ কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে ১ কেজি শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে ১ কেজি দেশী পুঁটি মাছের শুঁটকি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর এই ১ কেজি শুঁটকি মাছ পাইকারি বিক্রি করা যায় ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা দরে। চলনবিলের দেশী পুঁটি মাছের শুঁটকি বিক্রি করা হয় উওরাঞ্চলের সৈয়দপুর বাজারে।
শুঁটকি তৈরির শ্রমিক সবুরা বেগম, জামেলা বেগম ও শাহীদা বেগমসহ অনেকেই জানান, তারা অনেক বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। তারা যে পরিমাণ পরিশ্রম করেন সেই তুলনায় দাম দেয়া হয় না। এই কাজ খুব ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ হাতের মধ্যে মাছের কাঁটা বিঁধে ক্ষত হয়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা দেয়া হয়। এ টাকা দিয়ে পরিবার চালানো খুব কষ্ট হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, এখানে প্রতি বছর অনেক শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। চলনবিলের চারটি উপজেলায় শুঁটকি উৎপাদনকারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।