২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রামগঞ্জে ২ কোটি টাকা নিয়ে এনজিও লাপাত্তা!

রামগঞ্জে দুই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ এনজিও সংস্থা মানবকল্যাণের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রতিবাদ : নয়া দিগন্ত -


মানবকল্যাণ সংস্থা, সংক্ষেপে এমকেএস। সাইনবোর্ডে গভঃ রেজিঃ নং এস ১১৫৭০ (৭৮৫) ২০১২ইং। প্রশিক্ষণ ও মানবকল্যাণ কেন্দ্র নাম দিয়ে রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শেখপুরা বাজারের দক্ষিণে একটি নির্জন মার্কেটে তারা স্থাপন করে প্রকল্প কার্যালয়।
এ কার্যালয়টি কবে স্থাপন করা হয়েছে বা মানবকল্যাণ সংস্থা বা এমকেএসের কাজ কি তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি ভুক্তভোগী কেউই। তবে স্বল্প সুদে বিদেশযাত্রীদের বিশেষ ঋণ পাওয়ার সুবিধার কথা বলে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে বেসরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এভাবে সংস্থাটি দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দেয়া হিসেবে জানা গেছে। সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত প্রতারিত নারী-পুরুষ ভিড় করেন শেখপুরা প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে। টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কায় তারা নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রতারিতদের অভিযোগ, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাওয়ালিডাঙ্গা ডেঙ্গুর বাড়ির ফাতেমা বেগমের ২০ হাজার, ফাতেমা বেগমের ৩০ হাজার, মোহন আলমের ১৫ হাজার, পশ্চিম বিঘা গোদার বাড়ির জান্নাতুল ফেরদৌসের ৪০ হাজার, একই বাড়ির শিল্পী আক্তারের ২০ হাজার, পূর্ব বিঘা জগি বাড়ির আমেনা বেগমের ২০ হাজার, শামছুর নাহারের ২০ হাজার, পূর্ব বিঘা খন্দকার বাড়ির মমিন হোসেনের ২৯ হাজার, সাথী আক্তারের ১২ হাজার, জলিল মিয়ার ৩০ হাজার, ফাতেমা আক্তারের ১৫ হাজার, পূর্ব শেখপুরা সৈয়দ আলী ব্যাপারী বাড়ির মোরশেদ আলম সোহাগের ১৮ হাজার, নোয়াগাঁও গ্রামের মালেক হাজী বাড়ির আল আমিনের ৪০ হাজার, সোনাপুর খলিফা বাড়ির জামাল হোসেনের ৮ হাজার, পাশ্বর্বর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাফা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ১৭ হাজার, খলিলুর রহমানের ২০ হাজার, তাসলিমা আক্তারের ২০ হাজার, মিন্টু মিয়ার ৩০ হাজার, রাজিব হোসেনের ৩০ হাজার টাকাসহ দুই শতাধিক গ্রাহকের দুই কোটি টাকারও বেশি নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে সংস্থার লোকজন।

প্রতারণার শিকার লোকজন জানান, বেশিরভাগ মানুষই স্বামী বা ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ঋণ নিতে এ সংস্থার গ্রাহক হন। সপ্তাহে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় দিয়ে চাহিদামতো টাকার আবেদন করা হয় সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে। এক লাখ, দুই লাখ ও পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে এককালীন ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেয় সংস্থার ৪/৫ জন পুরুষ ও একজন মহিলা। এরপর গত ১৫ দিন আগে সবাইকে সোমবার (২৯ মে) ঋণ দেবে বলে খবর দেয়া হয়। কিন্তু অফিসে এসে দেখেন অফিসের মেইন গেটে তালা মারা। প্রতারিতরা আরো বলেন, সংস্থার কর্মকর্তা আতিক স্যার, আছমা ম্যাডামসহ সকলের মোবাইল বন্ধ। আমরা স্বল্প সুদে এখান থেকে ঋণ পাওয়ার আশায় অন্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছি। এখন আমরা সর্বস্ব হারিয়েছি। আমরা এখন কি করবো জানি না, চোখে অন্ধকার দেখছি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বলেন, এ বাড়িটি একই এলাকার মৃত আবদুল কাদের মিয়ার। তার স্ত্রী ও ছোট এক মেয়ে ছাড়া পরিবারের আর কেউ নেই। কিভাবে বাড়িটি এই এনজিও সংস্থা ভাড়া নিয়েছে আমরা তা জানি না। তবে এ সময় তিনি আরো জানান, ১৫-২০ দিন আগে লক্ষ্মীপুর থেকে কয়েকজন লোক এসে এখানে মালামাল রেখে যান। তারা পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে চুক্তি করবেন বলে জানালেও এখন তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রামগঞ্জ থানার এসআই ময়নাল ইসলাম। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে সঞ্চয়ের বইতে দেয়া কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়ে ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে ।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement