২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গজারিয়ায় বালুভরাট করে জমি দখলে তোড়জোড়

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা
গজারিয়ার নয়নগর গ্রামে মেঘনা নদীতে বসানো হয়েছে ড্রেজার : নয়া দিগন্ত -

মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীসংলগ্ন গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর মৌজার ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদী, শতবর্ষী পুরনো খাল ও একটি কোম্পানির জায়গা ভরাট করে দখল করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তার তোয়াক্কা না করে জায়গা দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে আরেকটি কোম্পানি। এ বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দু’টি কোম্পানি ও স্থানীয়দের মধ্যে। যেকোনো মুহূর্তে এখানে ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মতো ঘটনা।
সরজমিনে দেখা যায়, মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশের নয়নগর গ্রাম সংলগ্ন থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড কোম্পানির পাশে এ ওয়ান নেভিগেশন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি বালুভরাটের জন্য ড্রেজার বসিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বালুভরাটের কার্যক্রম শুরু না হলেও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন তারা, যাতে যেকোনো মুহূর্তে বালু ভরাটের কাজ শুরু করা যায়। স্থানীয়রা জানায়, কোম্পানিটি যে জায়গাতে বালু ভরাট করতে চাচ্ছে তার বেশির ভাগই সরকারি মালিকানাধীন নদীর জায়গা। সেখানে রয়েছে শতবর্ষ পুরনো একটি খাল ও থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড কোম্পানির জায়গায়।
থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড কোম্পানির পরিচালক (লজিস্টিক সাপোর্ট) এম এ রহমান আনসার বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি সকাল থেকে তারা দেখতে পান তাদের কোম্পানিসংলগ্ন মেঘনা নদীতে বালুভরাটের জন্য ড্রেজার বসানো হচ্ছে। তিনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সেখানে যান এবং ড্রেজার শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পারেন তাদের এ জায়গায় বালু ভরাটের জন্য এ ওয়ান নেভিগেশন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ভাড়া করে এনেছে।
যে জায়গায় বালু ভরাট করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সেখানে থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ৫৯.০৫ শতাংশ জমি আছে। এ জায়গায় স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা এবং জমি ক্রয়ের কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়া একটি কোম্পানি কিভাবে জায়গাটিতে বালুভরাটের কাজ করতে চাচ্ছে তা জানতে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আ ন ম জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন এম এ রহমান আনসার। যোগাযোগের একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর হোসনে পাটোয়ারী তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আপনারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা ধুয়ে পানি খান। আমি বালু ভরাট করব। বিষয়টি নিয়ে গজারিয়া থানায় এম এ রহমান আনসার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে গজারিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মামুন মিয়া বলেন, কোম্পানিটি এখনো বালু ভরাট শুরু করেনি। তবে তারা যে জায়গায় বালু ভরাট করতে চাচ্ছে সেটি নদী ও খালের জায়গা। পাশাপাশি সেখানে থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড নামে একটি কোম্পানির জায়গাও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও উভয় কোম্পানির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যা থেকে সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে এ ওয়ান নেভিগেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আ ন ম জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীর সাথে কথা বলতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, সরকারি জায়গা যাতে কোনোভাবে দখল হতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। এরই মধ্যে ভূমি অফিসের প্রতিনিধি জায়গাটি পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে সবাইকে সতর্ক করে এসেছে।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা সোহেব আলী বলেন, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছে।


আরো সংবাদ



premium cement