২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রক্তদহের দুই পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ ১২ মাসই

আদমদীঘির রক্তদহ খেয়াঘাটে পারাপারের একমাত্র ভরসা এক মাত্র খেয়া নৌকা : নয়া দিগন্ত -

বগুড়ার আদমদীঘি-রানীনগর দুই উপজেলার মাঝে রক্তদহ বিল। এই বিলপাড়ের মানুষদের দুঃখ যেন বারো মাসই। জীবনের প্রয়োজনে তাদের সারাদিনই বিলের এপাড়-ওপাড় যাতায়াত করতে হয়। একটিমাত্র খেয়াঘাট আর একটি মাত্র খেয়া নৌকা। এটাই তাদের একমাত্র ভরসা। একটি মাত্র সেতুর অভাবে দুঃখ যেন তাদের চিরকাল লেগেই থাকে।
জায়গাটি বগুড়ার আদমদীঘির রক্তদহ বিলের সান্দিড়া-বোদলার খেয়াঘাট। দুই উপজেলার মানুষের অনেক দিনের দাবি এখানে একটি সেতু নির্মাণের। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলও তাদের সেই দাবি আজো পূরণ হয়নি।
নওগাঁর রানীনগরের বোদলা, পালশা ও তেবারিয়াসহ ১১ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যোগাযোগের সহজ পথ এই খেয়াঘাটটি। এই খেয়াঘাটের এপাড়-ওপাড়ের সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ কমে যেত। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে এই খেয়াঘাটের দুই পাড়ের সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন পায় বলে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আন্দোলন স্তিমিত হয়, আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে দুই পাড়ের মানুষদের মধ্যে। পরর্বর্তীতে তিন-তিনটি বছর পেরিয়ে গেল কিন্তু সেতুটির বাস্তবায়ন কেউ দেখতে পেল না। এতে দুই পারের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আদমদীঘির সান্দিড়া গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ফেরদৌস হোসেন জানান, বোদলা-সান্দিড়া পারঘাটে সেতু হলে দু’পারের মানুষদের মধ্যে আত্মা ও আত্মীয়তার বন্ধন আরো সুদৃঢ় হতো। খুলে যেত ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার, ঘুচে যেত বেকারত্বও। কৃষকরা সহজেই ধানসহ সব শস্য ও সবজি বাজারজাত করতে কিংবা ঘরে তুলতে আরো সহজ হতো।
বোদলা গ্রামের বাসিন্দা দাউদুল হক বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু জেতার পর কেউ আর খোঁজ রাখেন না। বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের কাছে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বহুবার দাবি জানানো হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি ফের উপস্থাপনের পর সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন হয়। কিন্তু এরপরও তিন বছর পেরিয়ে গেল, ব্রিজ আর হলো না এখানে।
তেবারিয়া গ্রামের বুলবুল হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে রোগী বহন করতে হলে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। রোগী নিয়ে এখানে এসে একবার খেয়ানৌকা মিস হয়ে গেলে পুনরায় পেতে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্ব হয়ে যায়। একটি ব্রিজ নির্মিত হলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
বোদলার কলেজছাত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, রানীনগর উপজেলা সদরে পৌঁছাতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ খেয়াঘাটে একটি সেতু হলে ১১ কিলোমিটার পথ কমে যেত। মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই সান্তাহার কলেজে পৌঁছানো যেত। এতে দুর্ভোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সময়েরও সাশ্রয় হতো।
আদমদীঘি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রিপন কুমার সাহা জানান, সেতুটি রানীনগর উপজেলার মধ্যে হওয়ায় নির্মাণের দায়িত্ব তাদেরই। আমার জানা মতে, সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা হয়েছিল। তবে সেখানে খাল খননসহ আরো কয়েকটি প্রজেক্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রানীনগর উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাঈল হোসেন জানান, সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবপত্র পাঠানো হয়েছে। একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর মাটিও পরীক্ষা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু তারা সেতু আরো সম্প্রসারণ করা কথা জানিয়েছেন।
নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সব বিভাগীয় প্রক্রিয়া শেষে অর্থ বরাদ্দ পেলেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আমি আশাবাদী এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু নির্মাণের সুখবর অচিরেই পাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement