২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ত্রিশালে ৫৮ ইটভাটার ৪২টিই অবৈধ : জ্বলছে বনের কাঠ

ত্রিশালে তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠা হিটলার ব্রিকস। ইনসেটে ইট পোড়ানোর জন্য স্তূপ করে রাখা কাঠ : নয়া দিগন্ত -

নেই ছাড়পত্র বা কোনো প্রকার অনুমতি। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের সব ধারাকে উপেক্ষা করে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ফসলি জমি ও বসতি এলাকাসহ যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ৫৮টি ইটভাটা। ৫৮টি ভাটার মধ্যে ১৬টি বৈধ ও ৪২টিই অবৈধ। গাছপালা উজাড় করে ভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বাড়ছে পরিবেশের দূষণ, হারাচ্ছে কৃষিজমির উর্বরতা। তবু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টদের ছাড়ে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ভাটা।
গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ এবং ভাটায় কাঠের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে চোখে পড়েনি ত্রিশালে।
জানা যায়, উপজেলার ৫৮টি ইটভাটার ৪২টি ইটভাটা আইনের তোয়াক্কা না করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আবার অবৈধ ভাটাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বৈধ ১৬টিতেও অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
অথচ ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসব থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আর এ আইন লঙ্ঘন করে ভাটা স্থাপন করা হলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। জ্বালানি কাঠ ব্যবহারেও এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
সরেজমিন উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামে মেসার্স একতা ব্রিকস, কাজিরকান্দার টিবিসি ব্রিকস, রায়েরগ্রামের রোজ ব্রিকস ও বইলরের মেসার্স হিটলার ব্রিকসসহ বিভিন্ন ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, অবাধে পোড়ানো
হচ্ছে কাঠ।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন কাঠ পোড়াচ্ছেন জানতে চাইলে মেসার্স একতা ব্রিকসের মালিক আলমগীর হোসেন জানান, ভাটায় আগুন দেয়ার প্রথম দিন লাকড়ি লাগে। তা ছাড়া কয়লার দাম বেড়ে গেছে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের ফলে মাটির ওপরের স্তরের জৈব পদার্থ নষ্ট হয়ে যায়। আস্তে আস্তে উর্বরতা হারায় মাটি। ভাটা বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘ দিন থাকে এর প্রভাব। অন্তত ১০-১২ বছর জৈব সার ব্যবহারের পর আগের অবস্থানে ফিরে। যেহেতু স্থাপনা নির্মাণে ইট লাগবেই, তাই পরিবেশসম্মত ইটভাটার বিকল্প নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের কোনো চিঠি এখনো পাইনি। হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদফতরের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত অবৈধ ভাটায় অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশ অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক উপসচিব দিলরুবা আহমেদ বলেন, নীতিমালা অনুসরণ করে যারা ভাটা স্থাপন করেননি, আমরা তাদের লাইসেন্স দেইনি। অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে বসতিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বা ফসলি জমিতে থাকা ভাটা আমরা ভেঙে দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement